ভিটামিন ‘সি’ কী?
অ্যাসকরবিক অ্যাসিড (Ascorbic Acid) যা ভিটামিন-সি এর রাসায়নিক নামে পরিচিত। এটি একটি জৈব অম্ল, যা সাধারণত শাকসবজি, ফল প্রভৃতিতে পাওয়া যায়। এর রাসায়নিক সংকেত C6H8O6 এবং এটি একটি সাদা দানাদার পদার্থ। মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদের জন্য এটি একটি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। ‘ভিটামিন-সি’ দ্বারা মূলত এর একাধিক ভিটামারকে বোঝানো হয় যেগুলো প্রাণী ও উদ্ভিদের দেহে ভিটামিন-সি এর মত কাজ করে থাকে।
ভিটামিন-সি কেন খাবেন এবং কতটুকু খাবেন-
ভিটামিন সি হলো (Water soluble) অর্থ্যাৎ, পানিতে দ্রবণীয় তাই এটি শরীরে সঞ্চিত থাকে না। এই ভিটামিন প্রয়োজনের অতিরিক্ত গ্রহণ করলে তা প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যায় তাই আমাদের প্রতিদিনই একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে ভিটামিন সি খেতে হয়। যেমনঃ শিশুদের জন্য ৩০ থেকে ৩৫ মিলিগ্রাম, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৪৫ মিলিগ্রাম, গর্ভবতী মায়েদের জন্য ৫৫ মিলিগ্রাম ও প্রসূতি মায়েদের জন্য ৭০ মিলিগ্রাম।
দেহের ত্বক, দাঁত ও চুল ভালো রাখার কার্যকরী উৎস হলো ভিটামিন-সি এবং এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে থাকে যা আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়। সাধারণ সর্দি-কাশিতেও ভিটামিন-সি বেশ উপকারী করে থাকে।
অর্থ্যাৎ, শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন সি-এর অনেক গুরুত্ব রয়েছে।তাই অবশ্যই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ ফল ও শাকসবজি রাখতে হবে তাহলেই আমাদের ভিটামিন- সি এর দৈনিক চাহিদা পূরণ হয়ে যাবে।
যেসকল খাবারে ভিটামিন-‘সি’ পাওয়া যায়-
ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফলঃ
- কমলা: কমলায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি রয়েছে। একটা কমলায় প্রায় ৭০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি রয়েছে। গোটা কমলা বা কমলার রস ভিটামিন সি-এর উৎস। কমলার মতো অন্য ফলেও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে যেমনঃ জাম্বুরা ও মাল্টায় ভিটামিন-সি এর উৎস।
- পেয়ারা: পেয়ারা হলো ভিটামিন সি-এর ভালো উৎস। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি পাওয়া যায়। একটা গোটা পেয়ারা থেকে ৫৫ গ্রাম ওজনের ১২৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পাওয়া যায় বলে ধারণা করা হয়।
- লেবু: লেবুতে অনেক ভিটামিন সি রয়েছে । ১০০ গ্রাম লেবুতে ৫৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পেতে পারেন।
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ সবজিঃ
- পেঁপেঃ পেঁপে একাধারে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন-এ সহ ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ। এর মধ্যে বিটা-ক্যারোটিন, ফাইবার এবং ম্যাগনেসিয়ামের পাশাপাশি কম পরিমাণ ক্যালোরি থাকে। সালাদের সাথে দিয়ে অথবা জুস হিসেবে খেলেও স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।
- টমেটোঃ উজ্জ্বল লাল টমেটোর মধ্যে বেশী মাত্রায় ভিটামিন-সি থাকে। গোটা টমেটো খেতে পারেন কিংবা সালাদের মধ্যেও দিয়ে খেতে পারেন। একটা টমেটো রোজকার ভিটামিন সি-র চাহিদা পূরণ করে।
- পাতাকপিঃ পাতা কপি খুবই উপকারী একটি সবজি যেমন পাতা কপিতে একইসাথে ভিটামিন সি, ক্যারোটিনয়েড,লুটেনিন ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ রয়েছে।তাই খাদ্যতালিকায় পাতাকপি রাখতে পারেন।
- ফুলকপিঃ ফুলকপিতে ভিটামিন সি, ফাইবার, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অন্যান্য ভিটামিন ও মিনারেল থাকে এবং একই সাথে কম ফ্যাট এবং কার্বোহাইড্রেট ও ক্যারোটিনয়েড থাকে। এটাকে রোস্ট করে, ভেজে অথবা সেদ্ধ করে খেতে পারেন।
ভিটামিন-সি এর অভাবে যেসকল রোগ হয়
- ভিটামিন সি এর এভাবে যে রোগ হয় তাদের মধ্যে সবথেকে গুরুতর রোগটি হলো – স্কার্ভি রোগ । স্কার্ভি রোগ হলে দাঁতের মাড়ি ফুলে যায় এবং মাঝে মধ্যেই মাড়ি দিয়ে রক্ত পরে। এছাড়াও মুখে অনেক ঘা হয় এবং কোথাও কেটে গেলে সহজে সেই ক্ষত স্থান শুকায় না, এমনকি জয়েন্ট গুলোতেও ব্যাথা হওয়া শুরু করে।
- সামান্য আঘাতেই রক্ত বেরোতে শুরু করে, রক্তে লোহিত রক্তকণিকার পরিমান কমে যেতে থাকে, এর ফলে অনেক সময় রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া রোগ দেখা দেয়।
- ভিটামিন-সি এর অভাবে শরীরে দুর্বলতা অনুভব হয়, অনেক সময় ক্ষুধা কমে যায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, যার ফলে খুব সহজেই ঠান্ডা লেগে যায়।
সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।
লিখেছেন:
Umme Hafsa Eva
Food and nutrition Department, University of Dhaka
Reference: