আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যতম আবিষ্কার এন্টিবায়োটিক আবিষ্কার।পৃথিবীর প্রথম এন্টিবায়োটিক পেনিসিলিন আবিষ্কার হয় আলেকজান্ডার ফ্লেমিং এর হাত ধরে।
এন্টিবায়োটিকঃ এন্টিবায়োটিক হলো এন্টিমাইক্রোবিয়াল ড্রাগ।এটি এমন একটি উপাদান যা ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস থেকে সংগ্রহ করে অন্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস কে ধ্বংস জন্য বা তার বংশবৃদ্ধি রোধ করার বা দৈহিক বৃদ্ধি রোধ করার জন্য ব্যবহার করা হয়।এর জন্য অনেক রোগের চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে যার জন্য একসময় প্রচুর মানুষ মারা যেতো।এখন এন্টিবায়োটিক এর ফলে মানুষ অতিদ্রুত সুস্থ হয়ে যাচ্ছে।
এন্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্সঃ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে এন্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স হলো এমন এক অবস্থা যেখানে কতিপয় ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিকের আক্রমন থেকে বেঁচে থাকার ক্ষমতা অর্জন করে।এন্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স বর্তমানে প্রকট আকার ধারণ করছে।সাম্প্রতিক সময়ে এটা নিয়ে প্রচুর আলোচনা হচ্ছে।
সামান্য কোন অসুখ হলেই মানুষ এন্টিবায়োটিকের দিকে ছুটে। সাধারন জ্বর ঠান্ডা কাশিতেও অনেক মানুষ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই এন্টিবায়োটিক ফার্মেসী থেকে কিনে খাচ্ছে। জ্বর,ঠান্ডা কাশি এগুলো কিন্তু ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে। তাই সবসময় এন্টিবায়োটিক গ্রহণের প্রয়োজনীতা নেই। অনেকক্ষেত্রে কাজ হচ্ছে ঠিকই কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে দেহে এমন কিছু ব্যাকটেরিয়া থেকে যাচ্ছে যাদের উপর এন্টিবায়োটিক কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারে না।তারা এন্টিবায়োটিকের সান্নিধ্যে থেকে লড়াই করার কৌশল শিখে গেছে।আমরা নিজেদের শরীরকে এমন বানিয়ে ফেলছি যে অতিসামান্য ব্যাকটেরিয়ার সাথে লড়াই করতে পারছে না।নিজেদের অজান্তেই এন্টিবায়োটিক পূর্বের যুগে ফিরে যাচ্ছি।
মাল্টিপল এন্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্সঃ মাল্টিপল এন্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স হলো এমন এক অবস্থা যেখানে শরীরের জীবাণু ধ্বংস করতে বেশ কয়েক ধরনের ঔষধও কাজ করবে না।
প্রভাবঃ
১.যখন এন্টিবায়োটিক কোন কাজ করবে না তখন মেনিনজাইটিস, নিউমোনিয়া, টিউবারকিউলোসিস, পচন সহ বহু ব্যাকটেরিয়াঘটিত রোগে প্রান হারাবে মানুষ।
২.এধরনের ঔষধ বেশি গ্রহণের ফলে অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়াসহ অন্যান উপকারী ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে।
৩.রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
৪.ওজন বাড়ায়ঃ অনেক ডেইরি ফার্মে পশু মোটাজাতকরনে এন্টিবায়োটিক খাওয়ানো হয়।যা মানবশরীরে প্রভাব ফেলে।
৫. টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসের আশঙ্কাঃ ছোটবেলা থেকে বেশি এন্টিবায়োটিক খেলে টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা থেকে যায়।
৬.লিভারের ক্ষতিসাধন করে,এজমার সৃষ্টি করে।
এভাবে যদি আমরা এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করি তাহলে আমরা অস্তিত্ব সংকটে পড়ে যাবে।যার ফলে অদূর ভবিষ্যতে সামান্য সর্দি কাশিতেই মানুষের মৃত্যু ঝুঁকির তৈরী হবে।এর জন্য বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ” বিশ্ব এন্টিবায়োটিক সচেতনতা সপ্তাহ ” পালন করা হয়। এর উদ্দেশ্য হলো, মানুষকে এটা মনে করিয়ে দেয়া যে এন্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে, তাই এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া দরকার।
এন্টিবায়োটিক ব্যবহারে সতর্কতা :
১.প্রেসক্রিপশন ছাড়া এন্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধ করতে হবে
২.এন্টিবায়োটিক ঔষধ সম্পূর্ণ কোর্স শেষ করতে হবে। ঐ ঔষধগুলো একপ্যাকেটে প্যাকেটজাত করলে কেউ যেনো কোর্সের চেয়ে কম ঔষধ কিনতে না পারে। অথবা লাল রঙের প্যাকেট ব্যবহার করা যেতে পারে যাতে সহজেই মানুষ চিনতে পারে।
৩.এন্টিবায়োটিকে ডোজ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া যাবে না।
৪.জ্বর সর্দি কাশি সারাতে এন্টিবায়োটিকের প্রয়োজন নেই।
৫.অনেক এন্টিবায়োটিক অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় খাওয়া নিষেধ।
৬.অনেক এন্টিবায়োটিক অনেকের জন্য সংবেদনশীল ।
৭.সম্পূর্ণ কোর্স শেষ হওয়ার আগে শরীর ভালো লাগতে পারে।কিন্তু সম্পূর্ণ কোর্স ঔষধ সেবন করতে হবে নইলে জীবানু পুরোপুরি ধ্বংস হবে না।
৮.মেয়াদোত্তীর্ন ঔষধ সেবন না করা।
লিখেছেন ,