বর্তমান সময়ের বহুল আলোচিত রোগগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ডায়াবেটিস

প্রাথমিক চিকিৎসা রোগব্যাধি স্বাস্থ্য টিপস স্বাস্থ্য সংবাদ

ডায়াবেটিস শব্দটি আমাদের সবার কাছেই পরিচিত ৷বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ডায়াবেটিস এখন একটি মহামারি রোগ। এই রোগের অত্যধিক বিস্তারের কারণেই সম্প্রতি এমন ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা।

ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ:

প্রশ্ন আসতেই পারে, ডায়াবেটিস কী? আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন বলছে, ডায়াবেটিস এমনই একটি রোগ, যা কখনো সারে না। কিন্তু এই রোগকে সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

কিন্তু কী করে জানবেন ডায়াবেটিস হয়েছে কিনা? আসুন, দেখে নিই ডায়াবেটিস রোগের প্রধান লক্ষণগুলো কী কী –

*ঘন ঘন পানির পিপাসা।

*ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া।

*অতিরিক্ত ক্ষুধা।

ডায়াবেটিস এর ধরণ:

১. টাইপ -১ ডায়াবেটিস: টাইপ-১ ডায়াবেটিস যেকোন বয়সে হতে পারে। টাইপ-১ ডায়াবেটিস প্রধানত সংঘটিত হয় শিশু ও কৈশোরে। এই টাইপের ডায়াবেটিসে অগ্ন্যাশয় থেকে কোন প্রকারের ইনসুলিন নিঃসৃত হয় না। রক্তে সুগারের মাত্রা ঠিক রাখতে রক্তে ইনসুলিনের প্রয়োজন।

২.টাইপ – ২ ডায়াবেটিস: টাইপ 2 ডায়াবেটিস প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায় এবং ডায়াবেটিসের সমস্ত ক্ষেত্রে প্রায় 90% ক্ষেত্রে থাকে। এই টাইপের ডায়াবেটিকের দেহে প্রচুর পরিমান ইনসুলিন নির্গত হয়। জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে এই টাইপের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখা যায়। 

রক্তের গ্লুকোজের লক্ষ্যমাত্রা :

শিশু: খাওয়ার আগে- ৪-৭ মিলিমোল/ লিটার ৷

         খাওয়ার পর – ৫-৯ মিলিমোল/ লিটার ৷

প্রাপ্তবয়স্ক( টাইপ-১) : খাওয়ার আগে- ৫-৭ মিলিমোল/ লিটার ৷

                              খাওয়ার পরে – ৫-৯ মিলিমোল/ লিটার ৷

প্রপ্তবয়স্ক ( টাইপ -২) : খাওয়ার আগে – ৪-৭ মিলিমোল/ লিটার ৷

                                  খাওয়ার পরে – <  ৮.৫ মিলিমোল/ লিটার ৷

ডায়াবেটিস আছে 

এমন গর্ভবতী মহিলা : খাওয়ার আগে <৫.৩ 

মিলিমোল/ লিটার ৷

                                   খাওয়ার পর < ৭.৮ মিলিমোল/ লিটার ৷

ডায়াবেটিস এর প্রতিকার

১. ডায়াবেটিস প্রতিকারের জন্য প্রয়োজন সুশৃংখল জীবনযাপন ও খাদ্যভাস৷

২. প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, মাছ, কম চর্বি ও কম শর্করাযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করতে হবে ৷

৩. অধিক ক্যালরিযুক্ত খাবার, ফাস্টফুড,কোমল পানীয়, চকোলেট ইত্যাদি পরিহার করা৷

৪. কায়িক পরিশ্রমের অভ্যাস করা৷

৫. সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে ৷

ডায়াবেটিস এর প্রতিরোধ:

•প্রতিরোধের প্রথম ধাপ হচ্ছে দ্রুত রোগ শনাক্তকরণ ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান।

•ডায়াবেটিসের জটিলতাগুলো রোগের প্রাথমিক ধাপ থেকেই শুরু হয়। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় তাই ডায়াবেটিসের চিকিৎসা ও জটিলতা প্রতিরোধের অন্যতম পূর্বশর্ত। বয়স ৪৫ বা তার বেশি হলে, ওজন বেশি হলে, রক্ত সম্পর্কীয় নিকটাত্নীয়ের ডায়াবেটিস থাকলে, শারীরিক পরিশ্রমের ঘাটতি, মহিলাদের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বা অধিক ওজনের সন্তান প্রসবের পূর্ব ইতিহাস থাকলে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা জরুরি।

•পরিমিত খাদ্য, সুশৃংখল জীবন ও নিয়মিত ওষুধ সেবন এই তিনটি নীতি ডায়াবেটিসের রোগীরা সঠিকভাবে পালন করলে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপন করা  যাবে ৷

•অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসকে প্রয়োজনীয় ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা এবং ডায়াবেটিসজনিত জটিলতাগুলো এড়াতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। 

ডায়াবেটিস সম্পর্কিত কিছু তথ্য:

•প্রতি ১১ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। মোট আক্রান্তের পরিমাণ ৪২৫ মিলিয়ন ৷

•পৃথিবীর মোট ডায়াবেটিস রোগীর ৮৭ শতাংশ রয়েছেন উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোতে৷

•উন্নয়নশীল দেশে পুরুষেরা টাইপ ২ ডায়াবেটিসে বেশি সংখ্যায় ভোগেন ৷

•বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ ১০ ডায়াবেটিস সংখ্যাধিক্য দেশের মধ্যে অন্যতম ৷

•পৃথিবীতে বর্তমানে উচ্চ হারে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত ও চীনে ৷

ডায়াবেটিস সংক্রান্ত কিছু ভুল তথ্য:

১. ডায়াবেটিস শুধু বৃদ্ধ বয়সে হয়৷

২. দীর্ঘদিন ডায়াবেটিসের ওষুধ খেলে বৃক্ক নষ্ট হয়৷ 

৪. যারা মিষ্টি বেশি খায়, তাদেরই শুধু ডায়াবেটিস হয় ৷

৫. ডায়াবেটিস হলেই মানতে হবে বিশেষ খাদ্যাভ্যাস 

৬. ইনসুলিন শরীরের ক্ষতি করে ৷

Reference:

1.Wikipedia.

2.Prothom Alo newsportal.

3.Bdnews 24.com

4.Google.

5.Jugantor.

লিখেছেন:

Shorna Haque

Department of pharmacy (2nd year 2nd semester), Mawlana Bhashani Science & Technology University

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *