কিডনি আমাদের শরীরের এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এই শিম-বীজ আকৃতির অঙ্গটি আমাদের শরীর থেকে নাইট্রোজেন জাতীয় বর্জ্য পদার্থ অপসারণ করে, রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং আমাদের হাড়কে মজবুত রাখে। শরীরের গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গটি সুস্থ রাখতে আমাদেরকে কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে।নিচে তা আলোচনা করা হলঃ
#নির্দিষ্ট_কিছু_ঔষধ_বেশি_পরিমাণে_গ্রহণ_করা_থেকে_বিরত_থাকুন ~ নন- স্টেরয়ডাল এন্টি-ইনফ্লামেটরি ড্রাগস (NSAIDs) যেমনঃআইবুপ্রোফেন, ন্যাপ্রোক্সেন(জ্বর এবং ব্যাথা নাশক) গ্রুপের ঔষধ গুলো যদি আমরা দীর্ঘদিন খেয়ে থাকি তাহলে আমাদের কিডনির ক্ষতি হয়ে থাকে। এছাড়াও আমরা গ্রাস্টিক বা আলসারের জন্য যে প্রোটন পাম্প ইনহিবিটরস(PPIs) ব্যবহার করি এটাও আমাদের ক্রোনিক কিডনি রোগের ঝুকি বাড়িয়ে দেয়। তাই এই গ্রুপের ঔষধগুলো একমাত্র ডাক্তারের পরামর্শেই নেওয়া উচিত।
#এন্টিবায়োটিক_ঔষধ_সেবনে_সতর্ক_হোন ~ব্যাকটেরিয়া বিরুধী এই ঔষধগুলো যদি আপনি প্রায় সময়-ই বা বেশি পরিমাণে ব্যবহার করেন তাহলে আপনার কিডনি ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে। এর ফলে সুস্থ দেহেও আপনার কিডনিতে সমস্যা হবে এবং পরবর্তীতে আপনার কিডনি ভাল কাজ করবে না। কিছু এন্টিবায়োটিক যেমনঃ পেনিসিলিন, সাল্ফোনামাইডস এবং সেফালোস্পরিন্স বেশি পরিমাণে গ্রহণ আপনার কিডনিতে সমস্যা ডেকে আনবে।
#ভেষজ_জাতীয়_ঔষধ_সেবনের_পূর্বে_সতর্ক_হোন ~ Herbal supplement আমাদের শরীরের জন্য নিরাপদ এমন কোন প্রমাণ এখনো দিতে পারবে না হার্বাল উৎপাদনকারীরা। এই ঔষধ গুলোও আমাদের শরীরের কিডনি ড্যামেজ করে দিতে পারে। বিশেষ করে আপনার যদি কিডনিতে সমস্যা থাকে এবং এই অবস্থায় যদি আপনি এই ঔষধ গ্রহণ করেন তাহলে আপনার জন্য তা আরো ঝুকিপূর্ণ। তাই এই ঔষধ গ্রহণ করার পূর্বে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ নিন।
#স্বাস্থ্য_সম্মত_খাবার_গ্রহণ_করুন ~আপনি যা খান বা পান করেন সেটা খারাপ হোক বা ভাল হোক তার কিছু অংশ আপনার কিডনি পেয়ে থাকে বা কিডনিতে প্রসেস হয়ে থাকে।বিশেষ করে আপননি যদি বেশি পরিমাণে ফ্যাট, চিনি এবং লবণ জাতীয় খাবার গ্রহণ করে থাকেন তাহলে আপনার রক্ত চাপ বেড়ে যাবে, শরীরে মেদ জমবে এবং ডায়বেটিস হওয়ার আশংকা থাকবে। এতে আপনার কিডনি ড্যামেজ হতে পারে। তাই কিডনি সুস্থ রাখতে বেশি পরিমাণে শাকসবজি, বিভিন্ন ধরনের ফল, শস্য দানা খান।
#বাড়তি_লবণ_পরিহার_করে_চলুন ~লবণ বিভিন্ন উপায়ে আমাদের শরীর প্রভাবিত করতে পারে। লবণ আমাদের মুত্রে( Urine) প্রোটিনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, যা আমাদের কিডনির জন্য খুব ক্ষতিকর। এছাড়া অতিরিক্ত লবণ গ্রহণে আমাদের রক্ত চাপ বেড়ে যায়।, কিডনি রোগের / পাথরের জন্য উচ্চ রক্ত চাপ খুব ভালভাবে দায়ী।
#পর্যাপ্ত_পরিমাণে_পানি_পান_করুন পানি আমাদের কিডনিতে নিউট্রিয়েন্টস সরবরাহ করে থাকে। এছাড়া পানি আমাদের শরীর থেকে বিভিন্ন বর্জ্য পদার্থ মুত্র আকারে বের করে দেয়।আপনি যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করেন তাহলে আপনার কিডনির ফিল্টার( নেফ্রন) ড্যামেজ হয়ে যাবে এবং পরবর্তীতে কিডনি ইনফেকশন / পাথর হবে। প্রতিদিন গড়ে কমপক্ষে ৫-৭ গ্লাস পানি পান করুন। তবে আপনি যদি রোদে বা গরম পরিবেশে কাজ করেন তাহলে আপনাকে আরো বেশি পানি পান করতে হবে।
#অ্যালকোহল_পানিয়_পান_করা_থেকে_বিরত_থাকুন ~অ্যালকোহল জাতীয় পানিয় আমাদের কিডনি ড্যামেজ করে দিতে পারে। অতিরিক্ত মদ্য পান কিডনিতে হঠাৎ করে মারাত্নক আঘাত হানতে পারে এবং পরবর্তীতে দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা হওয়ার আশংকা থাকে। এছাড়া এলকোহল আমাদের শরীর থেকে পানি বের করে দেয় যার কারণে কিডনি ভাল কাজ করতে পারে না এবং শরীরের ওজন বেড়ে যায়, লিভার সমস্যা হয়, রক্ত চাপ বেড়ে যায়, ।
#ধুমপান_ত্যাগ_করুন ~ধুমপান কিডনি ক্যান্সারের ঝুকি বাড়িয়ে দেয় এবং কিডনির ধমনি, শিরাগুলো (Blood vessels) নষ্ট করে দেয় যার কারণে কিডনিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত চলাচল করতে পারে না। এতে কিডনির কাজে ব্যাঘাত ঘটে। এছাড়া ধুমপান কিছু নির্দিষ্ট ড্রাগস্ কে প্রভাবিত করে যা রক্ত চাপ বাড়িয়ে দেয়। এভাবে অনিয়ন্ত্রিত রক্ত চাপ আমাদের কিডনি ড্যামেজ করে দিতে পারে।
#স্বাস্থ্যের_দিকে_নজর_রাখুন আমাদের শরীরের দুটি সাধারণ সমস্যা যা আমাদের কিডনি ড্যামেজ করে দিতে পারে। তা হল উচ্চ রক্ত চাপ এবং ডায়বেটিস। স্বাস্থ্যকর খাবার এবং ব্যয়াম এই দুটি সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরি। রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ রাখতে হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ইন্সুলিন নিতে হবে।আর উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ডাক্তারের দেওয়া ঔষধ তালিকা অনুসরণ করতে হবে।
লেখক: আরমান ইসলাম রোমান শিক্ষার্থী: ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ফার্মেসি ডিপার্টমেন্ট।