আন্টিবায়োটিক থেকে রেজিসট্যান্স : বিপদে..বন্ধু যখন নীরব দর্শক।

বিবিধ রোগব্যাধি স্বাস্থ্য টিপস স্বাস্থ্য সংবাদ

                                                                                              

একথা অনিস্বীকার্য যে,১৯২৮ সালে যখন আলেকজন্ডার ফ্লেমিং প্রথম আন্টিবায়োটিক আবিষ্কার করেন সেটা ছিল চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য এক মাইলফলক।
যাইহোক,১৯৪১ সালে প্রথম আন্টিবায়োটিক পেনিসিলিন ব্যাবহার করা হয়।যার মাত্র এক বছরের মধ্যেই পেনিসিলিন রেজিসট্যান্স ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করা হয়।আর তখন থেকেই শুরু হয় আন্টিবায়োটিক ব্যাবহারের এক জটিল অধ্যায়।


আন্টিবায়োটিক :

আন্টিবায়োটিক হলো এক ধরনের ঔষধ যা ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগের প্রতিরোধ এবং চিকিৎসায় ব্যাবহার করা হয়। যেমন:পেনিসিলিন,টেট্রাসাইক্লিন ইত্যাদি।


আন্টিবায়োটিক রেজিসট্যান্স :

আন্টিবায়োটিক মূলত ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকরী হলেও ভাইরাসের বিরুদ্ধে অকার্যকর,
কিন্তু আন্টিবায়োটিকের অপরিকল্পিত এবং অধিক ব্যাবহার এটাকে ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধেও অকার্যকরী করে তুলে যা আন্টিবায়োটিক রেজিসট্যান্স নামে পরিচিত।

স্বাস্থ্যবিদদের কাছে এই শব্দটা উদ্বেগের হলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে এই সম্পর্কে কম ধারণা বা সচেতনতাই আছে।
আন্টিবায়োটিক রেজিসট্যান্স হলো ব্যাকটেরিয়া বা অনুজীবের প্রতিরোধক্ষমতা যা নির্দিষ্ট আন্টিবায়োটিককে অকার্যকর করে যদিও একটা সময় তারা ঐ আন্টিবায়োটিকের প্রতি কার্যকর ছিল।


আন্টিবায়োটিক রেজিসট্যান্সে মেকানিজম:

ব্যাকটেরিয়ার ডিএনএ এর যখন পরিবর্তন বা মিউটেশন ঘটে তখন ব্যাকটেরিয়া আন্টিবায়োটিকের বিরদ্ধে প্রতিরোধী হয়।তাছাড়া সাধারণ ব্যাকটেরিয়া গুলো জিন অপসারণের মাধ্যমেও রেজিসট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া থেকে প্রতিরোধক্ষমতা লাভ করতে পারে।এর কারণে ব্যাকটেরিয়ার গঠনে কিছু পরিবর্তন সাধিত হয় যার ফলে তার উপর প্রচলিত আন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হলেও তা কাজ করে না।যেটি ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগের চিকিৎসাকে জটিল করে তুলে।

ব্যাকটেরিয়া মূলত তিনভাবে আন্টিবায়োটিককে প্রতিরোধ করে।


১)ব্যাকটেরিয়াল এনজাইমের মাধ্যমে আন্টিবায়োটিককে ধ্বংস।
২)ব্যাকটেরিয়াল প্রোটিনের(টার্গেট) পরিবর্তন।
৩)আন্টিবায়োটিকের ব্যাকটেরিয়াল মেমব্রেনের মধ্যদিয়ে প্রবেশ করার ক্ষমতার পরিবর্তন।

আন্টিবায়োটিক রেজিসট্যান্সের ফল :

যাইহোক আন্টিবায়োটিক রেজিসট্যান্সের নতুন নতুন পদ্ধতি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তা সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছে।আন্টিবায়োটিক
গুলার কার্যকারিতা কমে যাওয়ার কারণে ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ যেমন :নিউমোনিয়া,যক্ষা,ব্লাড পয়জনিং,গনোরিয়া ইত্যাদি এর চিকিৎসা পদ্ধতি জটিল এমনকি অনেক সময় ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মূখীন হতে হচ্ছে।

আন্টিবায়োটিক রেজিসট্যান্সের অন্যতম প্রধান কারণ হলো আন্টিবায়োটিকের অধিক ব্যাবহার।যখনই আমরা আন্টিবায়োটিক ব্যাবহার করি তখন কিছু ব্যাকটেরিয়া মারা যায় কিন্তু তা রেজিসট্যান্ট ব্যাকটেরিয়ার উপর কার্যকরী হয় না।যত বেশি আন্টিবায়োটিক ব্যাবহার করা হয় তত বেশি রেজিসট্যান্ট ব্যাকটেরিয়ার হার বেড়ে যায়।

বাংলাদেশে আন্টিবায়োটিক রেজিসট্যান্স :

সাম্প্রতিক কালের একটি রিপোর্টে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউ বিভাগের ৫২% রোগীর আন্টিবায়োটিক রেজিসট্যান্স আছে।যেটা ২০১৮ সালে ১৪% এবং ২০০৮ সালে ৬.৫℅ ছিল।এই রিপোর্ট প্রমান করে বাংলাদেশের অবস্থা কতটা ভয়াবহ।তাছাড়াও প্রায় ৫৪.৫℅ পোল্ট্রি মুরগীর দেহে আন্টিবায়োটিক রেজিসট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশে আন্টিবায়োটিক রেজিসট্যান্সের কারন:

  • আন্টিবায়োটিকের অধিক ব্যাবহার।
  • প্রেসক্রীপশন ব্যাতীত আন্টিবায়োটিকের ব্যাবহার।
  • নজরদারীর অভাব।
  • সাধারন মানুষের আন্টিবায়োটিক সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে অজ্ঞতা।

যাইহোক,আমরা ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে অগ্রসর হচ্ছি,আর এখনি সঠিক পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে।তাই সকল সচেতন নাগরিক,স্বাস্থ্যসেবা কর্মী,ডাক্তার,ফার্মাসিস্ট ইত্যাদি সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে যাতে আন্টিবায়োটিকের যথাযথ ব্যাবহার নিশ্চিত করা যায়।

আন্টিবায়োটিক রেজিসট্যান্সের প্রভাব কমানোর জন্য যেসব বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে:


১)কেবলমাত্র সার্টিফায়েড চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আন্টিবায়োটিক ব্যাবহার করতে হবে।
২)আন্টিবায়োটিকের ব্যাবহারের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের সকল পরামর্শ মেনে চলতে হবে।
৩)অন্যের ব্যাবহার করা আন্টিবায়োটিক ব্যাবহার করা যাবে না।
৪)সবসময় পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।
৫)ফার্মেসীগুলোতে, চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ব্যাতীত আন্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধ করতে হবে।
৬)ফার্মেসীগুলোকে নজরদারির মধ্যে আনতে হবে।

সবেমাত্র, বিশ্ব ভয়াবহ করোনা মহামারীর ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে কিন্তু মানুষের মস্তিষ্কে, ভয়াবহ সেই দিনগুলোর স্মৃতি এখনো রয়ে গিয়েছে।যাইহোক আন্টিবায়োটিক রেজিসট্যান্সের হার যেভাবে বাড়ছে,সেভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে করোনার থেকেও ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। তখন আন্টিবায়োটিক নামক বন্ধু আর কাজে আসবে না।



Source:
1)https://www.acs.org/content/acs/en/education/whatischemistry/landmarks/flemingpenicillin.html#:~:text=But%20it%20was%20not%20until,Mary’s%20Hospital%20in%20London.
2)https://journals.sagepub.com/doi/full/10.1177/1357034X14561341
3)https://www.who.int/news-room/fact-sheets/detail/antibiotic-resistance
4)https://www.drugs.com/article/antibiotics.html
5)https://www.medicinenet.com/antibiotic_resistance/definition.htm
6)Mechanisms of bacterial resistance to antibiotics

L A Dever et al. Arch Intern Med. 1991 May.

7)https://www.amr.gov.au/about-amr/what-causes-amr
8)https://www.google.com/amp/s/www.tbsnews.net/bangladesh/health/52-icu-patients-bsmmu-multi-antibiotic-resistant%3famp
9)https://roar.media/bangla/main/health/antibiotics-resistance/amp

10)others source may be present or not

লিখেছেন:

Md Mehedi Hasan

Department of Pharmacy (5th year, 1st semester),Pabna University of Science And Technology

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *