যকৃত বা লিভার মানবদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গাণু। যকৃতের মাধ্যমে আমাদের শরীরের অপ্রয়োজনীয় দূষিত পদার্থ বের করে দেয় যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু মরণঘ্যাতী লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হলে যকৃত ধীরে ধীরে অকেজো হতে শুরু করে কেননা তখন আর ঠিকভাবে বিপাক ক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে পারে না,রক্ত জমাট বাঁধার উপকরণ তৈরি করতে পারে না,খাদ্য ও পুষ্টি উপাদানের সুষম বণ্টন সম্ভব হয় না যার ফলে জীবনযাত্রা অস্বাভাবিক হয়ে উঠে।
লিভার সিরোসিস হলে লিভার বা যকৃতে সূক্ষ্ম সূতার জালের মতো ফাইব্রোসিস বিস্তার ঘটায়।যা ধীরে ধীরে যকৃতের নরম অংশগুলোকে নষ্ট করে দিয়ে ক্ষত সৃষ্টি করে। এতে যকৃতের টিস্যু মোটা ও শক্ত হয়ে যায় যা ক্রমে ছোট ছোট দানা বাঁধে। যার কারণে লিভার তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে আসে। লিভার সিরোসিস এর জন্য দায়ী হেপাটাইটিস -বি ও সি ভাইরাস।
গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশে এরোগে আক্রান্ত হয়ে বছরে ২২হাজার ৫০০ জন মানুষের মৃত্যু ঘটছে। লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর তা সেরে ওঠার সম্ভবনা খুবই কম।মাত্র ২৫শতাংশ মানুষ ৫বছরের একটু বেশি সময় বাঁচতে পারে এ রোগ থেকে সেরে উঠার পর।কেননা এ রোগ ধীরে ধীরে ভয়ানক ক্যান্সারে পরিনত হয়।
লিভার সিরোসিস এর কারণ সমূহ : দীর্ঘদিন যাবৎ হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে আক্রমণে যকৃতের আকার সংকুচিত হয়ে যায় একই সাথে বিভিন্ন ক্ষত সৃষ্টি হয় যার কারণে যকৃতের কার্যাবলী নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়াও যদি যকৃতের উপরে চর্বি জমে যায় এবং দীর্ঘদিন ধরে লিভারের বিভিন্ন সমস্যায় আক্রান্ত থাকলে এরোগ সৃষ্টি হয়ে থাকে। আবার যদি কেউ অতিরিক্ত মদ্যপান এবং ডায়বেটিস এ আক্রান্ত থাকে তাহলেও হতে পারে।
লিভার সিরোসিসের লক্ষন: এটি মূলত রোগে আক্রান্ত হওয়ার স্থায়িত্বের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। প্রাথমিক অবস্থায় তেমন কোন উপসর্গ প্রকাশ পায় না। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে যে সমস্যাগুলো দেখা দেয় –
১.ক্ষুধামন্দা ভাব
২.দূর্বল অনূভুতি
৩.বমি বমি ভাব
৪.হালকা জ্বর
৫.ওজন মাত্রারিক্ত হ্রাস।
ধীরে ধীরে বেশি পর্যায়ে চলে গেলে যে উপসর্গগুলো দেখা যায় –
১.ত্বক হলদে হয়ে যায় যা পরে জন্ডিসে রূপ নেয়।
২.রক্তক্ষরন হতে পারে
৩.পা ফুলে যায়
৪.ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়
৫.ব্রউন বা কমলা রঙের মূত্র দেখা যায়
৬.পায়খানার সাথে রক্ত বের হয়
৭.মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পরে
৮.যৌন শক্তি কমে যায়
৯.মহিলাদের খুব তারাতাড়ি মেনোপজের সৃষ্টি হয় ইত্যাদি।
প্রতিকার :
১.মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে হবে
২.হেপাটাইটিস রোগের চিকিৎসা করতে হবে
৩.যে ঔষধসমূহ লিভারে মারাত্মক প্রভাব ফেলে তা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪.স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, কমপরিমান চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া।
চিকিৎসা : চিকিৎসকরা যকৃতের রোগে চিকিৎসার চেয়ে প্রতিকারের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেন। বর্তমানে বিশ্বে লিভার সিরোসিসের অনেক আধুনিক চিকিৎসা উদ্ধাসিত হয়েছে। বিশেষ করে হেপাটাইটিস বি এর ক্ষেত্রে শিশুদের জন্মের পরপরই টিকার ব্যাবস্থা। প্রাপ্তবয়স্করাও নিতে পারেন। হেপাটাইটিস সি থেকে বাঁচতে হলে একাধিক ব্যাক্তির শেভ করা ব্লেড দিয়ে শেভ করা যাবে না এবং অরক্ষিত যৌন সম্পর্ক পরিহার করতে হবে।
লেখক : হাসিবুল হাসান
ফার্মেসী বিভাগ, ৬ষ্ঠ ব্যাচ,
৩য় বর্ষ ১ম সেমিস্টার,
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।