আইবিএস একটি অস্বস্তিকর পেটের পীড়া !

প্রাথমিক চিকিৎসা রোগব্যাধি স্বাস্থ্য টিপস স্বাস্থ্য সংবাদ

 পেটের সমস্যাগ্রস্ত রোগীর ভোগান্তির শেষ নেই। আইবিএস অনেকের কাছে একটি আতঙ্কের নাম। অনেক রোগী আছে যারা পেটের সমস্যার জন্য ওষুধ সেবন না করলে থাকতে পারেন না। পেটের অশান্তি বড়ই অশান্তি। যার সমস্যা হয়- সে জানে পেটের জ্বালা কি যে বড় জ্বালা।

আইবিএস কি?

আইবিএস বা ইরেটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম এক ধরণের রোগ, যা অন্ত্রের একটি দীর্ঘ মেয়াদি ফাংশনাল বা কার্যগত সমস্যা। সিনড্রোম শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো একটি রোগের বিভিন্ন উপসর্গ। তাই আইবিএসকে পেটের বিভিন্ন উপসর্গের সংজ্ঞা হিসেবে ধরা হয়। মানবদেহে অন্ত্র ও খাদ্যনালী মাংসপেশি দ্বারা তৈরি টিউব বা নল। এই মাংসপেশির যখন অতিরিক্ত সঙ্কোচন ও প্রসারণ হয় তখন অন্ত্রের মধ্যে থাকা মলের গতি ব্যাহত হয়। এরপর পালাক্রমে শুরু হয় ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য।

আইবিএসের কারণ কী?

  • সাধারণত তরুণ-তরুণীরা এই সমস্যায় ভুগে থাকেন। যারা সব সময় উদ্বিগ্ন বা মানসিক চাপে থাকেন, তারা এতে বেশি ভোগেন। কোন একটি পরীক্ষা খারাপ হয়েছে দেখা গেল এর চাপ খাদ্য নালীর উপর  গিয়ে পড়েছে যার ফলে মলের ধরণ পালটে গেছে। আইবিএস রোগের একটি মূল কারণ এটি।
  • আমাদের খাদ্যনালি থেকে সেরোটোনিন নামক একটি হরমোন নিঃসৃত হয় যা খাদ্যনালির গতি নিয়ন্ত্রন করে। এটির পরিমাণ বেড়ে বা কমে গেলে খাদ্যনালির গতি পরিবর্তন হতে পারে।
  •  অন্যান্য রোগ, যেগুলো মানসিক চাপ বাড়িয়ে দেয়, সেগুলোও আইবিএসের কারণ হতে পারে।
  • এ ছাড়া খাদ্যাভ্যাস, অন্ত্রের প্রদাহ, অন্ত্রের সংক্রমণ, মাদক গ্রহণ, পেটের অপারেশন, বংশগত কারণ, হরমোনজনিত কারণ বিশেষ করে মহিলাদের মাসিক চক্রের সমস্যা এবং অনেক সময় এন্টিবায়োটিকসহ অনেক ওষুধ সেবনও আইবিএসের সমস্যাকে ত্বরান্বিত করে।

আইবিএসের লক্ষণ সমূহঃ

  • দিনে বেশ কয়েকবার মলত্যাগের প্রয়োজনবোধ যা দীর্ঘদিন স্থায়ী থাকে।
  • পেটে কামড় দিয়ে ব্যাথা।
  • পেট ফুলে যাওয়া।
  • মলের সাথে আম যাওয়া।
  • মলত্যাগ করার পর ঠিক ভাবে ত্যাগ হয়নি মনে হওয়া।
  • তেলযুক্ত খাবার এবং দই, দুধ-চা, পায়েস, সেমাই ইত্যাদি দুধ নির্মিত খাবার খেলে সাথে সাথেই দেখা যায় তাদের পেট খারাপ হয়ে পড়ে। 

আইবিএস এর ক্ষেত্র এই লক্ষণ সমূহ দীর্ঘদিন স্থায়ী থাকে।

আইবিএস থেকে পরিত্রাণের উপায় কী?

দুঃখজনক হলেও এটা সত্যি যে এই সমস্যার স্থায়ী কোনো সমাধান নেই। তবে একে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। রোগীর লক্ষণ অনুযায়ী খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। যেসব খাবারে সমস্যা বাড়ে, সেসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শমতে এন্টিস্পাস্মোডিক ড্রাগ নেয়া যেতে পারে যা উপসর্গ কিছুটা কমাতে পারে। এছাড়া মানসিক চাপ কমাতে হবে।

আইবিএস নিয়ে ভালো থাকার উপায়ঃ

  • যেসব খাবারে পেটের সমস্যা বাড়ে, সেসব এড়িয়ে চলতে হবে। দুধ, দুগ্ধজাত খাবার, শাক, অতিরিক্ত তেলে ভাজা বা ডিপ ফ্রাই খাবার, অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার, বেকারি, কৃত্রিম চিনি, ক্যাফেইন ইত্যাদি এড়িয়ে চলা উচিত।
  • নিয়মিত ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটির চেষ্টা করুন। এতে পেটের গ্যাস বা ফাঁপা ভাব কমবে।
  • মানসিক স্বাস্থের যত্ন নেয়া।
  • আইবিএস এর ক্ষেত্রে লোপেরামাইড, ডাইফেনোঅক্সালেট, অক্সিফেনোনিয়াম, মেবেভেরিন হাইড্রক্লোরাট প্রভৃতি ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এ ওষুধগুলো অন্ত্রের নাড়াচাড়া কমানোর মাধ্যমে কাজ করে।

রেফারেন্সঃ

  • ডা. মো. ফখরুল আলম, সহযোগী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, হলিফ্যামিলি মেডিকেল কলেজ।
  •  ডা. সুসেন কুমার সাহা, অধ্যাপক, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
  • ডা. মোহাম্মদ জাকির হোসেন, সহকারী অধ্যাপক, পরিপাকতন্ত্র ও লিভার রোগ বিভাগ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

লিখেছেন:

Muhammad Abdul Bari

Department of Pharmacy (3rd Year), Mawlana Bhashani Science and Technology University

8 thoughts on “আইবিএস একটি অস্বস্তিকর পেটের পীড়া !

  1. আমি নিজেই এই সমস্যায় দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলাম,,এতে আমার অনেক উপকার হইলো❤❤।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *