“আমার রক্তে যদি বাঁচে- মুমূর্ষ রোগীর প্রাণ, তাহলে আমি কেন করবোনা স্বেচ্ছায় রক্তদান?”

স্বাস্থ্য টিপস স্বাস্থ্য সংবাদ

আমাদের দেশের অনেকের রক্তদান সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায়, রক্তদানে একপ্রকার ভীতি আমাদের রয়ে গেছে। অনেকে ভেবে থাকেন রক্ত দেওয়ার ফলে শরীরের রক্ত কমে গিয়ে অসুস্থ হবার সম্ভবনা রয়েছে। তবে এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। বরং একজন সুস্থ মানুষের নিয়ম করে ৪ মাস পরপর রক্তদান করা উচিত। এতে যেমন একজন রোগীর জীবন বাঁচে তেমনি রক্তদাতার শরীরও থাকে সুস্থ। একজন সুস্থ মানুষের দেহে সাধারনত ৫-৬ লিটার রক্ত থাকে। রক্তদানের সময় সেখান থেকে নেওয়া হয় মাত্র সাড়ে ৪শ’ মিলিলিটার, প্রয়োজন ভেদে কম-বেশি হতে পারে।

নরমাল হিমোগ্লোবিন লেভেল –

সদ্য ভূমিষ্ঠ মানব শিশুঃ ১৭-২২ গ্রাম/ডেসিলিটার

এক মাস বয়সের শিশুঃ ১১-১৫ গ্রাম/ডেসিলিটার

সাধারণ শিশু বয়সঃ ১১-১৩ গ্রাম/ডেসিলিটার

প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষঃ ১৪-১৮ গ্রাম/ডেসিলিটার

প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলাঃ ১২-১৬ গ্রাম/ডেসিলিটার

এই হিমোগ্লোবিন লেভেল ৮ গ্রাম/ডেসিলিটার কিংবা তার চাইতে কমে গেলে সাধারণত রক্ত পরিসঞ্চালনের প্রয়োজন হয়। বড় কোনো দুর্ঘটনায় আহত, ব্লাড ক্যান্সার, অস্ত্রোপচার, সন্তান প্রসব অথবা থ্যালাসেমিয়ার মতো বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন হয়।

তবে চাইলেই যে কেউ রক্ত দিতে পারবে এমনটা কিন্তু না। এক্ষেত্রেও রয়েছে কিছু শর্ত। যেমন –

• রক্তদাতাকে সম্পূর্ণ সুস্থ হতে হবে।

• রক্তদাতার বয়স ১৮-৬৫ বছরের মধ্যে হতে হবে।

• ওজন কমপক্ষে ৫০ কেজি হতে হবে।

• দেহের তাপমাত্রা, রক্তচাপ ও নাড়ির গতি থাকতে হবে স্বাভাবিক।

• রক্তে হিমোগ্লোবিন কমপক্ষে ৭৫ শতাংশ পরিমাণে থাকতে হবে।

এছাড়াও যেসব স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে রক্তদান করা যাবে না-

• ক্যান্সার
• এইচআইভি
• হৃদরোগ
• ভাইরাল হেপাটাইটিস
• ডায়াবেটিস
• রক্তক্ষরণ জনিত রোগ
• মৃগীরোগ
• সিজোফ্রেনিয়া
• অ্যাজমা
• লেপরোসী
• যক্ষ্মা

রক্তদানের পর করণীয়:

• পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে।

• বেশি বেশি পানি পান করতে হবে।

• ঐ দিন ভারি কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

• আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।

রক্তদানের উপকারিতাঃ

• রক্তদানের ফলে আমাদের শরীরে অবস্থিত “বোন ম্যারো” বা অস্থিমজ্জা নতুন রক্তকণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়।

• নিয়মিত রক্তদানের ফলে কমে যায় হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাক এর ঝুঁকি। পাশাপাশি ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার ঝুঁকিও অনেকটাই কমে যায়।

• আগাম বার্ধক্য থেকে রক্ষা মেলে।

• রক্তদান ওজন কমাতেও সাহায্য করে।

• রক্তের কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয়, এতে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

• রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়।

আসুন প্রতি চারমাস পরপর নিজে রক্ত দিই এবং অন্যকে রক্তদানে উৎসাহিত করি। আপনার আমার রক্তে বাঁচুক আরও কিছু প্রাণ।

তথ্যসূত্রঃ
১. bbc
২. who.int
৩. wikipedia.

লেখকঃ তাসনিম আক্তার
বিভাগঃ ফার্মেসি
সেশনঃ ২০১৮-১৯

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *