অনেকে আছে যারা রাতের পর রাত শুয়ে জেগে থাকে, ঘুমানোর চেষ্টা করলেও তাদের ঘুম আসে না। আবার ঘুমানোর পর মধ্যরাতে জেগে যায়। চেষ্টার পরও আর ঘুমাতে পারে না। অনেকে এটাকে খুব সাধারণ ব্যাপার মনে করে গুরুত্ব দেয় না। কিন্তু সারা দিনের কাজকর্ম শেষে শরীর ও ব্রেনের বিশ্রাম দরকার হয়। ঘুমের সমস্যা নিয়মিত চলতে থাকলে ক্রনিক (chronic) হয়ে পরে অসুখে পরিণত হয়। ডাক্তারি ভাষায় একে বলে ইনসোমনিয়া (insomnia)। ইনসোমনিয়ার কারণ অতিরিক্ত দুশ্চিন্তাই ইনসোমনিয়ার মূল কারণ। ফোনে কথা বলা, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, পড়াশোনা ইত্যাদি কারণে ঘুমে দেরি হয় এবং পরে সঠিক সময়ে ঘুম আসে না।
এ ছাড়াও আরও বেশ কিছু কারণ আছে যা আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। যেমন-
১) প্রচন্ড মানসিক চাপ (চাকরি হারালে, প্রিয়জন মারা গেলে অথবা ডিভোর্স হলে যেমন চাপ হয়)।
২) ডিপ্রেশন বা অবসাদগ্রস্ত, টেনশন, দুঃস্বপ্ন ইত্যাদি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
৩) অতিরিক্ত ক্যাফেইন পান, যেমন- চা, কফি ইত্যাদি উত্তেজক পদার্থ ঘুমের ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে।
৪) নিয়মিত অ্যালকোহল গ্রহণ করলে ঘুমের সমস্যা হতে পারে। প্রথম প্রথম অ্যালকোহল গ্রহণ করলে ঘুমের সমস্যা না হলেও পরবর্তীতে ইনসোমনিয়ার সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
৫) ধূমপান বা অন্যান্য মাদকদ্রব্য সেবন তরুণ সমাজের ইনসোমনিয়ার একটি অন্যতম প্রধান কারণ।
৬) উচ্চরক্ত চাপ এবং কিছু কিছু রোগের কারণে মস্তিষ্কে রাসায়নিক দ্রব্যের তারতম্য ঘটলে ইনসোমনিয়া হতে পারে।
ইনসোমনিয়ার লক্ষণ রাত্রে ঘুমের সমস্যার পাশাপাশি ইনসোমনিয়ার যেসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে-
১) দিনের বেলা ঘুম ঘুম ভাব লেগে থাকতে পারে।
২) ঘুম ঘুম ভাব লেগে থাকলেও দিনের বেলা ঘুমানোর চেষ্টা করলে ঘুম আসতে চায় না।
৩) সারাদিন ক্লান্তি লাগতে পারে।
৪) মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকতে পারে।
৫) ক্লান্তির কারণে দিনের বেলা কোন কাজে মনোযোগ দিতে কষ্ট হতে পারে। এসব উপসর্গ মাঝে মধ্যে মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছরও থাকতে পারে।
ইনসোমনিয়া প্রতিরোধের উপায়:
১)ঘুমের আগে দীর্ঘসময় ধরে মোবাইল, কম্পিউটার ইত্যাদি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। এগুলোর আলোর কারণে ঘুম আসতে দেরি হয়।
২) দিনের শেষাংশে ক্যাফেইন, নিকোটিন, অ্যালকোহল ইত্যাদি থেকে দূরে থাকুন। ক্যাফেইন এবং নিকোটিন এর কারণে ঘুম আসতে দেরি হতে পারে। অ্যালকোহলের কারণে রাত্রে ঘুম ভালো না হতে পারে এবং মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে যেতে পারে।
৩)নিয়মিত ব্যায়াম করুন। তবে ঘুমের আগে ব্যায়াম করবেন না, তাহলে ঘুম আসতে সমস্যা হবে। রাতে ব্যায়াম করলে ঘুমের কমপক্ষে তিন-চার ঘন্টা আগে করুন।
৪)রাত্রে খুব বেশি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। ঘুমের আগে পেট অতিরিক্ত ভর্তি করে খেলে ঘুম ভালো হবে না।
৫) আপনার বেডরুমকে আরামদায়ক করুন। ঘরটা যেন অন্ধকার ও শব্দহীন এবং খুব বেশি গরম অথবা ঠান্ডা না হয় তার দিকে খেয়াল রাখুন। যদি শব্দের সমস্যা থাকে তাহলে এয়ার প্লাগ (air plug) পরে ঘুমানোর চেষ্টা করুন
৬) বিভিন্ন পজিশনে শুয়ে দেখুন, কোনটাতে আপনি সবচেয়ে বেশি আরাম অনুভব করছেন। ঘুমের আগে রিলাক্স হওয়ার জন্য বই পড়তে, গান শুনতে অথবা গোসল করতে পারেন। আপনার যদি ঘুম না আসে তাহলে বিছানা থেকে উঠে বই পড়ুন।
৭)বেনজোডায়াজিপিন শ্রেণির বেশ কিছু ওষুধ অনিদ্রার চিকিৎসায় সাফল্যের সঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে, এবং তাদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণগুলির মধ্যে আছে:
- কোয়াজিপ্যাম (ডোরাল)।
- ট্রায়াজোলাম (হ্যালসিয়োন)।
- এস্টাজোলাম (প্রোসোম)।
- টেমাজিপ্যাম (রেস্টোরিল)।
- ফ্লুরাজিপ্যাম (ডালমেন)।
- লোরাজিপ্যাম (অ্যাটিভ্যান)।
- বেনজোডায়াজিপিন শ্রেণিভূক্ত নয় এমন সিডেটিভ বা ঘুমের ওষুধও অনিদ্রার জন্য ব্যবহৃত হয় এবং তার মধ্যে বেশিরভাগ নতুন ওষুধ আছে। তাদের মধ্যে কয়েকটি নতুন ওষুধ হল: জেলপ্লন (সোনাটা), জোলপিডেম (অ্যামবিয়েন বা অ্যামবিয়েন সি আর , এবং এজোপিক্লোন (লুনেস্টা। খাওয়া-দাওয়া ও সুস্থ জীবন পরিচালনার মাধ্যমে ইনসোমনিয়াকে দূরে রাখুন।
তথ্যসূত্রঃ
১। https://www.myupchar.com/bn/disease/insomnia
২। https://www.deshrupantor.com/specially/2019/03/22/130950
৩। https://www.shajgoj.com/insomnia-causes-symptoms-prevention-in-bengali/
লেখকঃ সিনজানা সিদ্দিকা দোলন
৪র্থ বর্ষ-২য় সেমিস্টার
মাভাবিপ্রবি।