উচ্চরক্তচাপ মরনঘাতী রোগ। রক্তপরিবাহি নালির ভেতর দিয়ে রক্ত যখন চলাচল করে তখন পরিবহন নালির (ধমনীর) গায়ে যে অতিরিক্ত চাপ পড়ে তাকেই উচ্চরক্তচাপ বলে।একজন স্বাভাবিক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের রক্তের চাপ (সিস্টোলিক-হৃদ সংকোচন,ডায়স্টোলিক-হৃদ প্রসারন)সাধরনত ১২০/৮০ মিলিমিটার অব মারকারি। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন ২০১৮ এর গাইডলাইন অনুযায়ী রক্তের চাপ ১৩০/৮০ মিলিমিটার অব মারকারি এর বেশি হলেই তাকে উচ্চরক্তচাপ বলে ধরা যায়।এক্ষেএে শুধু মাএ এক বা দুইবার ব্লাড প্রেশার মেপে উচ্চরক্তচাপ হয়েছে বলে ধারনা করা যাবে না।অন্তত পক্ষে তিন দিন প্রশান্ত ভাবে রক্তচাপ মাপতে হবে। এবং এই একই ধরনের রক্তচাপ যদি তিন মাসের ও অধিক সময় ধরে থাকে তাহলে তাকে উচ্চরক্তচাপ বলে ধরতে হবে।
উচ্চরক্তচাপে স্বাস্থ্য ঝুঁকি ;
২০১৭-১৮ বাংলাদেশ জনমিতি স্বাস্থ্য জরিপ এর হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতি ৪ জনের ১জন মানুষ এই সমস্যায় ভুগেন।এবং বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী সারা বিশ্বের ১৫০ কোটি মানুষ এই সমস্যায় আক্রান্ত এবং যার মধ্য প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষ প্রতিবছর মারা যায়।
উচ্চরক্তচাপের কারনে-
● হৃদপেশি দূর্বল হয়ে যায় যার ফলে হার্ট স্বাভাবিক ভাবে রক্তপাম্প করতে পারে না। ফলস্বরূপ হার্ট ফেইলিউরের মতো দূর্ঘটনা ঘটে।
● রক্তনালির দেওয়াল সংকুচিত হয়ে হার্ট অ্যাটাক ও হতে পারে।
● স্ট্রোক,কিডনি ড্যামেজ।
● উচ্চরক্তচাপের কারনে রেটিনায় রক্ত ক্ষরন হয় যার ফলে চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
উচ্চরক্তচাপের কারন;
উচ্চরক্তচাপের জন্য নানাবিধ কারন দায়ী মনে করা হয়।যেমন-
● অতিরিক্ত লবন গ্রহন (৬০ ভাগ রোগীই অতিরিক্ত লবন খাওয়ার কারনে উচ্চরক্তচাপে ভোগেন)
● অতিরিক্ত মেদ,টেনশন,কাজের চাপ
● মদ্যপান
● অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ
● শব্দদূষণ
● বৃক্কজনিত অসুস্থতা
উচ্চরক্তচাপের লক্ষণ;
● চোখে ঝাপসা দেখা
● অস্থির হয়ে যাওয়া এবং শরীর কাঁপতে থাকা
● মাথা ব্যাথা,বমি বমি ভাব
● ঘাড় ব্যাথা
● প্রসাবে রক্ত,ক্লান্তি,বুকে ব্যাথা
● রাতে ভালো ঘুম না হওয়া
উচ্চরক্তচাপের পরীক্ষা ;
উচ্চরক্তচাপের লক্ষন গুলোর কোনটি দেখা দিলে আমাদের উচিত হবে ভালো চিকিৎসকের মাধ্যমে ব্লাড প্রেশার নির্ণয়ের সাথে সাথে পুরো বডি চেক আপ করানো। উচ্চরক্তচাপ এর জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা যেমন –
● প্রসাব পরীক্ষা
● ইসিজি
● বুকের এক্স রে
● রক্তে সুগার,ইউরিয়া ও কোলেস্টেরল মেপে নেওয়া
উচ্চরক্তচাপের প্রতিকার;
● খাবারে অতিরিক্ত লবন পরিহার করা।প্রতিদিন ১চা চামচ এর বেশি লবন খাওয়া যাবে না
● ধূমপান, মদ্যপান পরিহার করা
● সবুজ শাকসবজি, ফলমূল (ডাবের পানি,কলা টমেটো) খাওয়া
● অতিরিক্ত কোলেস্টেরল যেমন ঘি,মাখন,পনির,লাল মাংশ,ডিমের কুসুম না খাওয়া
● নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং পর্যাপ্ত পরিমান ঘুমানো
● নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করা
উচ্চরক্তচাপের চিকিৎসা ;
উচ্চরক্তচাপের চিকিৎসায় বিভিন্ন শ্রেনীর ওষুধ যেমন বিটা ব্লকার, এ সি ই ইনহিবিটর, ভ্যাসোডাইলেটর ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। প্রোপ্রানলোল,হাইড্রালাজিন, ডায়াজোক্সাইড,সোডিয়াম নাইট্রোপ্রোসাইড,ট্রাইমিথাফেন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। গর্ভাবস্থায় রক্তের চাপ বেশি থাকে, অনেক ক্ষেএে যা কিনা সন্তান প্রসবের পর কমে যায়। গর্ভাবস্থায় উচ্চরক্তচাপের ওষুধ গ্রহন করা উচিত নয়। মিথাইল ডোপা এবং কিছু বিটা ব্লকার যেমন এটিনলল গর্ভাবস্থায় ভ্রুণের কোন ক্ষতি করে না বলে অনেক বিশেষজ্ঞরাই ধারনা করেন এছাড়া হাইড্রালাজিন দিয়েও গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
অনেক ক্ষেএে দেখা যায় একক মাএার এবং একটি মাএ প্রেশার কন্ট্রোল ঔষুধ খেয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ থাকে না। সেক্ষেএে একাধিক বার ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ঔষুধ খেতে হয় যা কিনা বয়স্ক মানুষদের ক্ষেএে বিরক্তিকর এবং কষ্টসাধ্য হয়ে যায়।এজন্য বর্তমানে ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি গুলো ‘কম্বিনেশন ড্রাগ’ বা দুটি নির্দিষ্ট মাএার ঔষুধ সংযুক্ত করে বাজারজাত করার ব্যাবস্থা করেছেন। গবেষণায় দেখা যায় যে উচ্চরক্তচাপের ওষুধ রাতে সেবন করা সবথেকে কার্যকর কারন এই সময় শরীরের রক্তচাপ তুলনামূলক কম থাকে।উচ্চরক্তচাপ একপ্রকার নিরবঘাতক ব্যাধী যা একদিনে কখনও প্রকাশ পায় না। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত স্বাস্থ্যসস্মত খাবার খাওয়া ও নিয়মিত স্বাস্থ্য চেকআপ করা। সর্বোপরি একজন ফার্মাসিস্ট হিসাবে বলতে চায় যে -আসুন আমরা ‘সঠিক পদক্ষেপ গ্রহন করি এবং উচ্চরক্তচাপ কে না বলি’
রেফারেন্স-
- https://www.bbc.com/bengali/news-
54565825.amp#aoh=16361307306145&referrer=https%3A%2F%2Fwww.google.com&
tf=From%20%251%24s 2. https://www.prothomalo.com/life/health/%E0%A6%89%E0%A6%9A%E0%A7%8D%E0 %A6%9A- %E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%9A%E0%A6%BE% E0%A6%AA%E0%A7%87- %E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%A3%E0%A7%80%E0%A6%AF%E0%A6%BC 3. https://bn.m.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%89%E0%A6%9A%E0%A7%8D%E0%A6%9A %E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%9A%E0%A6%BE
%E0%A6%AA - https://samakal.com/tp-
dinratri/article/200642122/%E0%A6%89%E0%A6%9A%E0%A7%8D%E0%A6%9A-
%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%9A%E0%A6%BE%
E0%A6%AA-
%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%
E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A3%E0%A7%87
5.
https://samakal.com/bibidh/article/1705291616/%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%
B0%E0%A7%87%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B0
-%E0%A6%93%E0%A6%B7%E0%A7%81%E0%A6%A7-
%E0%A6%96%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%A8-
%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BF-
%E0%A6%96%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%A8-
%E0%A6%A8%E0%A6%BE
লিখেছেনঃ
Urmi Parvin
Department of Pharmacy (3rd Year)
Mawlana Bhashani Science and Technology University