এন্টিবায়োটিক কি??
এন্টিবায়োটিক বেশ পরিচিত একটা শব্দ।এটা যে এক ধরনের ওষুধ, সেটা আমরা সকলেই জানি। সাধারনত এন্টিবায়োটিক হচ্ছে এমন কিছু যা কোনো অনুজীব (ব্যাকটেরিয়া/ফাঙ্গাস)থেকে সংগ্রহ করা হয় কিংবা সিনথেটিক্যালি উৎপাদন করা হয় এবং যা অন্যান্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস কে ধ্বংস করে অথবা তাদের বংশবৃদ্ধি রোধ করে।যেমন পেনিসিলিন, সেফালোস্পোরিন ইত্যাদি।
আবিষ্কারের ইতিহাসঃ
এন্টিবায়োটিক কে বলা হয় দুর্ঘটনাবশত আবিষ্কৃত এক ওষুধ।আলেকজান্ডার ফ্লেমিং ১৯২৭ সালে এক পরীক্ষার সময় লক্ষ্য করেন কালচার মিডিয়ামে এক ধরনের ছত্রাকের উপস্থিতিতে staphylococcus aureus(স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস-একধরনের ব্যাকটেরিয়া) নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে!কালচার মিডিয়াতে আসলে কোনো ত্রুটির কারনে ছত্রাকের জন্ম নেয়।ফ্লেমিং পরে এই ছত্রাকটি নিয়ে পরীক্ষা করেন এবং চিহ্নিত করেন। সেই ছত্রাকটি ছিলো পেনিসিলিয়াম।প্রথম আবিষ্কৃত এন্টিবায়োটিক। ফ্লেমিং বলেছিলেন, “আমি পেনিসিলিন আবিষ্কার করিনি বরং প্রকৃতিই তা করেছে।এটি আমার দুর্ঘটনাপ্রসূত আবিস্কার মাত্র”
এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স-এক ভয়াবহ সমস্যাঃ
বর্তমান বিশ্বে মূখ্য আলোচনার একটি বিষয় হচ্ছে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স।এন্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের কারনে দিন দিন এন্টিবায়োটিক সহনীয় ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।এন্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহার না করলে ব্যাকটেরিয়া পুরোপুরি ধ্বংস না হয়ে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।তখন আর ঐ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে ঐ এন্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা থাকে না।এই অবস্থা কে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বলে।যখন কেউ ডাক্তারের দেওয়া এন্টিবায়োটিকের পুরা কোর্স সম্পন্ন করে না তখন এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ব্যাকটেরিয়া তৈরী হয়।
এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের কারনসমূহঃ
অবহেলা বশত ডাক্তারের নির্ধারন করে দেওয়া এন্টিবায়োটিকের ডোজ কমপ্লিট না করা এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের প্রধান কারন।তাছাড়া আরও অনেক কারন আছে যার কারনে এন্টিবায়োটিক রিজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া তৈরী হয়।
-যত্রতত্র এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার।যেমন পোল্ট্রি ফার্মে মুরগীর গ্রোথের জন্যে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়।বছর দুয়েক আগে বাংলাদেশ পাস্তুরিত দুধে এন্টিবায়োটিকের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছিলো।
-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে পরিকল্পনার অভাব।এই ব্যাপারে ভারতের একটা ঘটনা উল্লেখ করা যায়।ভারতের হায়দ্রাবাদের এক বৃহৎ ওষুধ শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত অতিরিক্ত এন্টিবায়োটিকের কাঁচামাল পাশের নদীতে গিয়ে মিশে।এতে করে হায়দ্রাবাদসহ আরো দূরবর্তী অঞ্চলে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট জীবানু তৈরী হয়।গবাদিপশু এবং মানুষকে এ জীবানু পানিবাহিত হয়ে আক্রান্ত করে।
-অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বসবাস এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলা।
সুপারবাগঃ
সুপারবাগ হচ্ছে সে সকল ব্যাকটেরিয়া যারা অধিকাংশ এন্টিবায়োটিকের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্যান্ট।এর একটি বড় কারন হচ্ছে একটি এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া তার আশেপাশের পরিবেশের ব্যাকটেরিয়ার কাছে রেজিস্ট্যান্ট জিন ট্রান্সফার করে।ব্যাকটেরিয়ার প্লাজমিডে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স জিন পাওয়া গেছে।প্লাজমিড হচ্ছে একধরনের ডিএনএ যা এক ব্যাকটেরিয়া থেকে অন্য ব্যাকটেরিয়াতে জিনেটিক ইন্সট্রাকশন বহন করে।
এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের ভয়াবহতাঃ
এই সমস্যা প্রতিরোধ করতে না পারলে এমন একটা সময় আসবে যাখন সাধারন সর্দি-কাশি,জ্বরে মানুষ মারা যাবে।কারন তখন কোনো এন্টিবায়োটিক কাজ করবে না।এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ব্যাকটেরিয়া মানুষের শরীরের নরমাল ফ্লোরা অর্থাৎ উপকারী ব্যাকটেরিয়া কেও ধ্বংস করে দেয়।১৯৪৫ সালে নোবেল পুরষ্কার হাতে ফ্লেমিং বিশ্বকে সচেতন করে দিয়ে বলেছিলেন,”এন্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার প্রকৃতিতে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ক্ষতিকারক অনুজীবের পরিমান বাড়িয়ে দিতে পারে যা বুমেরাং হতে পারে”।তার এই সতর্কবানী এখন সত্যে পরিনত হচ্ছে।
প্রতিরোধের উপায়ঃ
এই সমস্যা সমাধানে সবচেযে বেশি জরুরী জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি।এই বিষয়টির ভয়াবহতা সম্বন্ধে জনগনকে ভালোভাবে জানানো উচিত এবং ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া এন্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধ করা উচিত।যত্রতত্র এন্টিবায়োটিক এর ব্যবহার বন্ধ করা উচিত।তাছাড়া আরো কিছু চেষ্টা এই সমস্যা সমাধান করতে পারে-
১/সাধারন রোগে এন্টিবায়োটিক খাওয়া বাদ দিয়ে প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক হিসেবে খ্যাত আদা,মধু,রসুন,লবঙ্গ ইত্যাদি ব্যবহার করা ভালো।
২/ এন্টিবায়োটিকের বিকল্প হিসেবে নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের বেলায় ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টা করা উচিত।
লিখেছেনঃ
Jubayra Jafrin Shifa
Biochemistry and Molecular Biology
Mawlana Bhashani Science and Technology University
রেফারেন্সঃ
১/ https://t.ly/bxnx
২/ https://t.ly/aPD4
৩/ https://t.ly/wR2G