আমরা সকলেই কম বেশি এলার্জি নামক রোগটির সঙ্গে পরিচিত । তবে হয়তো এটি সম্পর্কে সঠিক ধারনা এখনও আমাদের অনেকেরই নেই। এখানে আমরা এলার্জি সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।
*এলার্জি কি?
এলার্জি শব্দটি গ্রিক শব্দ ALLOS এবং ERGOS শব্দের সমন্বয়ে তৈরি। যার অর্থ পরিবর্তিত প্রতিক্রিয়া। আমাদের শরীর সব সময়ই ক্ষতিকর বস্তুকে (পরজীবী, ছত্রাক, ভাইরাস, এবং ব্যাকটেরিয়া) প্রতিরোধের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধের চেষ্টা করে। এই প্রচেষ্টাকে রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়া বা ইমিউন বলে। কিন্তু কখনও কখনও আমাদের শরীর সাধারণত ক্ষতিকর নয় এমন অনেক ধরনের বস্তুকেও ক্ষতিকর ভেবে প্রতিরোধের চেষ্টা করে। সাধারণত ক্ষতিকর নয় এমন সব বস্তুর প্রতি শরীরের এ অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াকে এলার্জি বলা হয়। অ্যালার্জি (ALLERGY) নানা ধরনের হতে পারে। যেমন – ফুড অ্যালার্জি, ডাস্ট অ্যালার্জি, পোলেন অ্যালার্জি।
* এলার্জিক রাইনাইটিস দুই ধরনের —
সিজনাল এলার্জিক রাইনাইটিসঃ বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় এলার্জিক রাইনাইটিস হলে তাকে সিজনাল এলার্জিক রাইনাইটিস বলা হয়। —
পেরিনিয়াল এলার্জিক রাইনাইটিসঃ সারা বছর ধরে এলার্জিক রাইনাইটিস হলে তাকে পেরিনিয়াল এলার্জিক রাইনাইটিস বলা হয়।
* এলার্জির কারনঃ
১! ঘরের জমানো ধুলো হাঁপানি জনিত এলার্জির অন্যতম কারণ। ঘরের ধুলোবালিতে মাইটি নামক এক ধরনের জীবাণু থাকে যা শতকরা প্রায় 60% অ্যালার্জি সৃষ্টির জন্য দায়ী ।
২! মাথা ব্যথা, জ্বর, ফোঁড়া, পাঁচড়া ইত্যাদির কারণে আমরা পেনিসিলিন ও অ্যাসপিরিন ঔষধ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই খেয়ে থাকি। আর এ পেনিসিলিন ও অ্যাসপিরিন থেকেও শরীরে এলার্জিজনিত চুলকানি হতে পারে।
৩! এছাড়াও বিভিন্ন ধরণের খাবারের কারনেও হতে পারে এলার্জি সমস্যা। যেমন (গরুর মাংস, চিংড়ি, মসুর ডাল, ইলিশ মাছ, হাঁসের ডিম ,হাঁসের মাংস, বেগুন, দুধ ইত্যাদি )
*লক্ষণ:
১. অ্যালার্জি জনিত সর্দি বা ‘অ্যালার্জিক রাইনাইটিস’ এর উপসর্গ হচ্ছে অনবরত হাঁচি, নাক চুলকানো, নাক দিয়ে পানি পড়া বা নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, কারও কারও চোখ দিয়েও পানি পড়ে এবং চোখ লাল হয়ে যায়।
২. সাধারণত অ্যালার্জি হলে হঠাৎ শরীরে দানা ওঠা শুরু হয় বা শরীরে বিভিন্ন স্থানের ত্বক লাল চাকা চাকা হয়ে ফুলে যায় এবং সেই সঙ্গে প্রচণ্ড চুলকানি হতে পারে। অনেক সময় সারা শরীরও ফুলে যায় এবং শ্বাসকষ্ট, বমি, মাথাব্যথা, পেটব্যথা, অস্থিসন্ধি ব্যথা,ডাইরিয়া ইত্যাদি হয়।
* চিকিৎসা এলার্জেন পরিহারঃ যখন এলার্জির সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায়, তখন তা পরিহার করে চললেই সহজ উপায়ে এলার্জি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
ওষুধ প্রয়োগঃ এলার্জিভেদে ওষুধ প্রয়োগ করে এলার্জি অনেকটা দূর করা যায়।
অ্যান্টিহিস্টামিন ড্রাগ —
• Cetirizine (Zyrtec, Zyrtec Allergy)
• Lovastatin
• Fexofenadine (Allegra, Allegra Allergy)
• Levocetirizine (Xyzal, Xyzal Allergy)
• Loratadine (Alavert, Claritin)
এলার্জি ভ্যাকসিন বা ইমুনোথেরাপিঃ এলার্জি দ্রব্যাদি থেকে এড়িয়ে চলা ও ওষুধের পাশাপাশি ভ্যাকসিনও এলার্জিজনিত রোগীদের সুস্হ থাকার অন্যতম চিকিৎসা পদ্ধতি। এ পদ্ধতি ব্যবহারে কর্টিকোষ্টেরয়েডের ব্যবহার অনেক কমে যায়। ফলে কর্টিকোষ্টেরয়েডের বহুল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে রেহাই পাওয়া যায়। বিশ্বের অধিকাংশ দেশে, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে। বর্তমানে বিশ্বস্বাস্হ্য সংস্হাও এই ভ্যাকসিন পদ্ধতির চিকিৎসাকে এলার্জিজনিত রোগের অন্যতম চিকিৎসা বলে অভিহিত করে। এটাই এলার্জি রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি সুস্হ থাকার একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি।
** অ্যান্টিহিস্টামিন বা এলার্জির ওষুধ বেশি খেলে কি সমস্যা হতে পারে? অ্যান্টিহিস্টামিনের বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে যা অত্যন্ত ক্ষতিকর। কোষ্ঠকাঠিন্য, হৃদস্পন্দনের গতি বেড়ে যাওয়া, গলা-মুখ শুকিয়ে যাওয়া, মুত্রত্যাগের সমস্যা এমনকি রক্তচাপ অস্বাভাবিক হারে কমে যেতে পারে অ্যান্টিহিস্টামিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রভাবে।
সতর্কতা
১. ধুলোবালি থেকে যতদূর সম্ভব দূরে থাকতে হবে
২. এলার্জির কারন এমনসব খাবার পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে
৩. চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ওষুধ সেবন করতে হবে
লেখকঃ তাসনিম আক্তার
বিভাগ – ফার্মেসি
সেশন – ২০১৮-১৯
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।