এই রোগটি স্থানীয় টাক সমস্যা হিসাবেও পরিচিত, যা হলো মূলত এক ধরনের স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুক্তিযোগ্য রোগ। এই রোগে শরীরের একটি অংশে অথবা সকল এলাকা জুড়ে চুল পড়া সমস্যটি ঘটে, বেশিরভাগ সময় মাথার খুলিতে নিজের ত্বক কোষ নিজেকেই চিনতে না পারার কারণে নিজের কলা ধ্বংস করে থাকে। এখানে এটি আক্রমনকারী হিসাবে কাজ করে।
এলোপেসিয়াকে নিম্নোক্তভাবে দেখা যেতে পারেঃ
• এলোপেসিয়া এরিয়াটা, যেখানে স্কাল্পের বা মাথার খুলির ত্বকের চুলগুলি গোছা হয়ে পড়ে যায়, সাধারণত গোলাকার ভাবে।
• এলোপেসিয়া টোটালিস, যাতে স্কাল্প থেকে সম্পূর্ণ চুল পড়ে যায়।
• এলোপেসিয়া ইউনিভার্সালিজ, যাতে সারা শরীর থেকে চুল পড়ে যায়।
হারানো চুলগুলি আবার গজাতে পারে, তবে এটি আবার পড়ে যাওয়ারও প্রবণতা থাকে।
এটির প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গঃ
এলোপেসিয়ার, বিভিন্ন রূপ, এবং বিভিন্ন উপসর্গ দেখা যায়, যেমন:
• এলোপেসিয়া এরিয়াটাতে গোলাকার বা মুদ্রা আকৃতিতে চুল উঠে যায়। যখন আপনি ঘুম থেকে উঠবেন চুলের বড় গুচ্ছগুলি বালিশের উপরে দেখা যেতে পারে। চুল উঠে যাওয়া স্থানটির আকার পরিবর্তিতও হতে পারে, সেক্ষেত্রে আপনি চুলের ঘনত্ব কোথাও কোথাও কম হয়ে যাচ্ছে সেটা অনুভব করতে পারেন। স্কাল্প থেকে চুলের উঠে যাওয়া খুবই সাধারণ; যাইহোক, এলোপেসিয়া চোখের পাতা, ভ্রু বা দাড়িতেও দেখা যায়। আরেকটি বিরল বৈশিষ্ট্য হল স্কাল্প-এর পিছন দিকের চুল উঠে যাওয়া।
• এলোপেসিয়া টোটালিসে, মানুষজনের স্কাল্পের সম্পূর্ণ চুল উঠে যেতে পারে।
• এলোপেসিয়া ইউনিভার্সালিস-এর ক্ষেত্রে, সারা শরীরের চুল উঠে যায়।
• কখনও কখনও এলোপেসিয়া নখকে আক্রান্ত করে এবং তাদের নিষ্প্রাণ, ভঙ্গুর, রুক্ষ বা এমনকি নখ ভেঙেও যেতে পারে। নখের সমস্যা কখনও কখনও এলোপেসিয়ার প্রথম উপসর্গ হতে পারে।
প্রধান কারণঃ
এলোপেসিয়া একটি জিনগত অবস্থা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে এবং এটি একটি অটোইমিউন রোগ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ। এর মানে হল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা চুলকে আক্রমণ শুরু করে। ফলস্বরূপ, ব্যাপক চুলের উঠতে শুরু করে।বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ রোগের উৎপত্তিতে বংশগতির প্রভাব রয়েছে। ১০-২০ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগের পারিবারিক ইতিহাস থাকে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবারই এ রোগ হতে পারে।
এ রোগে চুল পড়া ছাড়া সাধারণত অন্য কোনো সমস্যা; যেমন চুলকানি বা ব্যথা অনুভূত হয় না। এলোপেসিয়া রোগের সঙ্গে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ অটোইমিউন রোগের যোগাযোগ রয়েছে। যেমন শ্বেতি, থাইরয়েড গ্রন্থির কিছু রোগ, ডায়াবেটিস, ডাউন সিন্ড্রম, এটপিক ডার্মাটাইটিস ইত্যাদি।
রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসাঃ
এলোপেসিয়া সাধারণত ত্বক বিশেষজ্ঞ দ্বারা নির্ণীত হয়। অবস্থাগুলি পরীক্ষা করা যেতে পারে এমন বিভিন্ন উপায় রয়েছে, যেমন:
• অন্যান্য অটোইমিউন রোগের উপস্থিতি পরীক্ষা করার জন্য রক্ত পরীক্ষা করা যেতে পারে।
• কিছু চুলের গোছা তুলে পরীক্ষা করা হতে পারে।
• এলোপেসিয়া নিশ্চিত করার জন্য ত্বকের বায়োপসি করা যেতে পারে।
এলোপেসিয়ার সঠিক কোন নিরাময় নেই। চুল বৃদ্ধি পেতে সাধারণত তার নিজস্ব সময় লাগে, এবং চুল এইভাবে পুনরায় বৃদ্ধি পায়। কখনও কখনও দ্রুত বৃদ্ধি ঘটতে পারে।
চুল বাড়ার গতি বাড়ানোর জন্য ত্বক বিশেষজ্ঞরা নিম্নলিখিত চিকিৎসাগুলির পরামর্শ দিতে পারেন:
• কর্টিকোস্টেরয়েডস রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থাকে দমন করতে সাহায্য করে। এইগুলি দেওয়া হয় ক্রিম বা লোশন হিসাবে বা ইনজেকশন হিসাবে আক্রান্ত স্থানে প্রয়োগের জন্য। খাওয়ার বড়িও পাওয়া যায় তবে সাধারণত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে এড়ানো হয়।
• এন্থ্রালিন একটি ঔষধ যা রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতাকে লক্ষ্য করে প্রযুক্ত হয়। এটি খুব কার্যকর এবং প্রয়োগের এক ঘন্টা পরে ধুয়ে ফেলা হয়।
• মিনোক্সিডিল চুল বৃদ্ধির জন্য কার্যকরী এবং স্কাল্প, দাড়ি বা ভ্রু-র উপর প্রয়োগ করা যেতে পারে। এটি পুরুষ, মহিলা এবং শিশুদের জন্য নিরাপদ এবং দিনে দুইবার ব্যবহার করা যেতে পারে।
• ডিফেন্সিপ্রন একটি ঔষধ, যা মাথার টাকের ক্ষেত্রে কার্যকরী। এটি লাগানোর পরে, একটি প্রতিক্রিয়া সংঘটিত হয় এবং রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা এটির সঙ্গে যুঝতে শ্বেত রক্ত কণিকা পাঠায়। এই পদ্ধতিতে, চুলের গোড়া সক্রিয় রাখা হয়, ফলে চুল পড়া বন্ধ হয়।
• টেক্রোলিমাস অথবা পাইমেক্রোলিমাস মলম, ফটোথেরাপি, সাইক্লস্পোরিন, মেথট্রেক্সেট ইত্যাদি ওষুধও ব্যবহার করা হয়।
লেখকঃ তামান্না ৬ষ্ঠ ব্যাচ, ফার্মেসি বিভাগ।
সেশনঃ ২০১৮- ২০১৯,
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।