ভাইরাস জনিত কারণে অথবা বায়ুদূষণ বা ধূমপানের কারণে সর্দি-কাশি হয়। দীর্ঘদিনের সর্দি,কাশি ও হাঁচি থেকে একসময় স্থায়ীভাবে এ্যাজমা বা হাঁপানী রোগের সৃষ্টি হয়। এটি শ্বাসনালির প্রদাহজনিত দীর্ঘমেয়াদি একটি রোগ। এটি ছোঁয়াচে বা জীবাণুবাহিত রোগ নয়।
শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণত সর্দি-কাশি থেকে হাঁপানী রোগের সৃষ্টি হতে পারে। এজন্য শিশুদের যাতে ঠান্ডা না লাগে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
এ্যাজমা বা হাঁপানী সাধারণত ২ ধরনের হয়ে থাকেঃ
১.একিউট বা তীব্র এ্যাজমাঃ এতে ফুসফুসের বায়ুবাহী নালিসমূহ আকস্মিক ভাবে সংকুচিত হয়ে যায়,ফলে
শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্টের সৃষ্টি হয়।
২.ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি এ্যাজমাঃ এতে ঘন ঘন এ্যাজমায় আক্রান্ত হয় এবং রোগ নিয়ন্ত্রণে ও প্রতিরোধে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
যে সকল কারণে হাঁপানী হতে পারে-
এলার্জি জাতীয় খাবার (চিংড়ি মাছ,গরুর মাংস,হাঁসের মাংস, ইলিশ মাছ),বায়ুর সাথে ধোঁয়া, ধুলাবালি, ফুলের রেণু,ধুমপান, মশার কয়েল ইত্যাদির ধোয়া শ্বাস গ্রহণের সময় ফুসফুসে প্রবেশ করলে হাপানী হতে পারে।
সাধারণ লক্ষণ গুলো
১.হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া।
২.শ্বাসকষ্টে দম বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থার সৃষ্টি হওয়া,ঠোঁট নীল হয়ে যাওয়া, গলার শিরা ফুলে যাওয়া।
৩.জোরে জোরে শ্বাস নেওয়ার ফলে, বুকের ভিতর সাঁই সাঁই শব্দ হওয়া।
৪.দীর্ঘমেয়াদী কাশিতে ভুগতে থাকা এবং কাশির সাথে সাদা কফ বের হওয়া।
৫.বুকে চাপ অনুভব করা,ব্যায়াম করলে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া।
৬.গলা খুসখুস করা ও শুষ্কতা অনুভব করা ।
হাঁপানী কখন এবং কেন হয়
হাঁপানী যে কোনো বয়সেই হতে পারে। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে এ রোগ বেশি দেখা যায়। বংশগত কারণে বা পরিবেশ গত কারণেও এ রোগ হতে পারে। মানসিক চাপে থাকলে হাঁপানীর তীব্রতা বেড়ে যায়। হাঁপানীর উপসর্গ গুলো সাধারণত রাতে বা খুব সকালে বেশি হয়।
রোগ নিয়ন্ত্রণের উপায় বা প্রতিকার
হাঁপানী সম্পূর্ণ রুপে ভাল করার জন্য এখনো কোনো ঔষধ আবিষ্কার করা হয়নি। তবে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এ রোগ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় । হাঁপানী সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগী পুরো সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে। হাঁপানী নিয়ন্ত্রণের একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো সতর্কভাবে লক্ষ্য রাখা কোন কোন কারণে রোগীর শ্বাস কষ্ট বেড়ে যায়, তা নির্নয় করা এবং তা থেকে দুরে থাকা।
যে সকল খাদ্য খেলে শ্বাস কষ্ট বেড়ে যায় সেগুলো না খাওয়া।
আলো বাতাসপূর্ণ গৃহে বসবাস করা।
ধূমপান, গুল,সাদা পাতা,জর্দা ইত্যাদি ব্যবহার পরিহার করা।
শ্বাসকষ্টের সময় রোগীকে তরল খাদ্য খাওয়ানো ।
হাঁপানী রোগীর করণীয়
এ্যাজমা বা হাঁপানীর ঔষধ অথবা ইনহেলার সব সময় হাতের কাছে রাখতে হবে । নিয়মিত চেকআপ করাতে হবে। নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করতে হবে। ধূমপান ও ধুলাবালি এড়িয়ে চলা, মানসিক চাপ ও উৎকন্ঠা এড়িয়ে চলা। ফ্রিজের কোমল পানীয়, আইসক্রিম, ফ্রিজে রাখা খাবার এগুলা পরিহার করে চলতে হবে।
আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় এ্যাজমা রোগীদের মুখের খাবার ঔষধের চেয়ে ইনহেলার বেশি ব্যবহার করা হয়। কারন এর পাশ্ব প্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। এছাড়া একটি ট্যাবলেট এর কার্যকারিতা শুরু হতে ১-২ ঘন্টা সময় লাগে,যা জরুরি সময়ে কম কার্যকর।অপরদিকে ইনহেলার ব্যবহারের ফলে খুব দ্রুত ফুসফুসের মধ্যে ঔষধ প্রেরণ করা যায়। সঠিক নিয়মে ইনহেলার ব্যবহার করলে খুব দ্রুত শ্বাস কষ্টের পরিমান কমানো যায়।
সর্বপরি,এ্যাজমার আক্রমণ থেকে বাঁচার উপায়
ধুলাবালি এড়িয়ে চলতে হবে। বাসায় এমন পশু-পাখি না রাখা যেগুলো থেকে এ্যালার্জির প্রকোপ বাড়তে পারে। ধূমপান ছাড়তে হবে, ধূমপায়ীর আশপাশে থাকা যাবে না। বাইরে গেলে মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। ঠান্ডা পরিহার করতে হবে। এলার্জি জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না। পশমি জামা কাপড়, কম্বল ব্যবহার করা যাবে না। কড়া গন্ধের প্রসাধনী এড়িয়ে চলতে হবে। সপ্তাহে একবার বিছানার চাদর, বালিশের কাভার বদলাতে হবে। শীতে বাইরে বেরনোর সময় পর্যাপ্ত গরম কাপড় ব্যবহার করতে হবে। নিয়মিত ইনহেলার নিতে হবে। নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে। অরিতিক্ত ওজন কমাতে হবে।
তথ্য সংগ্রহঃবোর্ড বই নবম-দশম শ্রেণি,দৈনিক জনকণ্ঠ পএিকা(জানুয়ারি ২২,২০১৯)
Darun👏