প্যারাসিটামল ওষুধটি অ্যাসিটামিনোফেন নামেও পরিচিত। সাধারণ মানুষ ওষুধটি নিরাপদ বলেই জানেন। যদিও কয়েক বছর আগে আমাদের দেশে প্যারাসিটামল সিরাপের বিষক্রিয়ায় কয়েকটি মৃত্যুর ঘটনা আছে। প্যারাসিটামল বিশ্বজুড়েই কোনো ধরনের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই কেনা যায়।
অনেক গুলো প্যারাসিটামল একসাথে খেলে তা জীবনের জন্য হুমকি হবে তা বলার অপেক্ষা রেখেনা, তবে গবেষকরা সম্প্রতি সতর্ক করেছেন যে, দীর্ঘ দিন ধরে সামান্য বেশি পরিমান প্যারাসিটামল খেয়ে গেলেও তা জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে।
অ্যানালস অব দ্য রিউম্যাটিক ডিজিজ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে দেখা গেছে, প্যারাসিটামল মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তাই ওষুধটি আগের মতো নিরাপদ ভাবার কারণ নেই।
১) লিভারের ক্ষতি
প্যারাসিটামলে যে লিভারের ক্ষতি হয়, তা আগেই জানা গিয়েছিল। সে জন্য ডিএল মিথিওনিন যুক্ত করে প্যারাসিটামল বাজারে ছাড়া হয়েছিল। তখন দেখা যায়, ডিএল মিথিওনিন উপকারের চেয়ে ক্ষতি করছে বেশি। তাই ওষুধটি বিশ্বজুড়েই নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়। প্যারাসিটামল সেবন করলে তা লিভারে গিয়ে মেটাবলিজম বা বিপাক হয় এবং মেটাবলিজম হওয়ার সময় কিছু উপাদান টক্সিন বা বিষে পরিণত হয়। যত বেশি প্যারাসিটামল সেবন করা হবে, তত বেশি টক্সিন তৈরী হবে এবং লিভারের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্যারাসিটামলের ডোজ স্বাভাবিকের মাত্রা অতিক্রম করলে লিভার পুরোপুরি নষ্ট হয়ে রোগী মারাও যেতে পারে।
একটি প্যারাসিটামল ট্যাবলেট সাধারণত ৫০০ মিলি গ্রামের হয়। ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ আটটি এই মাত্রার প্যারাসিটামল সেবন করা যায়। এক দিন অতিরিক্ত ডোজ সেবন করলেই লিভারের অসুখ হতে পারে। তাছাড়াও প্রায়ই যদি সাধাররণ কারণেই প্যারাসিটামল সেবন করা হয়, তাহলে ধীরে ধীরে লিভারের কিছু কিছু ক্ষতি হয়। ১৯৯০ থেকে পরবর্তী ২০০০ সাল পর্যন্ত শুধু আমেরিকায় প্যারাসিটামলজনিত লিভারের অসুখে ২৬ হাজার জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল এবং এর মধ্যে সাড়ে চার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
২) ত্বকের অ্যালার্জি ও রক্তের ক্যান্সার
প্যারাসিটামলের জন্য হওয়া অ্যালার্জি কিছু ক্ষেত্রে রোগীর মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। মারাত্মক ধরনের অ্যালার্জির মধ্যে আছে স্টিভেন জনসন সিনড্রোম, টক্সিক অ্যাপিডার্মাল নেকরোলাইসিস। আবার প্যারাসিটামল রক্তের কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল অনকোলজিতে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্যারাসিটামল সেবনের সঙ্গে রক্তের কিছু ক্যান্সার বা ব্লাড ক্যান্সারের সম্পর্ক আছে, বিশেষ করে লিম্ফোমা ও লিউকেমিয়ার ক্ষেত্রে।
৩) অ্যাজমা, অটিজম, এডিএইচডি
গর্ভকালীন প্যারাসিটামল সেবনে গর্ভস্থ শিশুর জন্মগত সমস্যা হয় না, কিন্তু অন্য ধরনের ক্ষতি হতে পারে। নরওয়েজিয়ান ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায় গর্ভকালীন প্যারাসিটামল সেবনে অ্যাজমার প্রকোপ বেড়ে যায় এবং শ্বাসকষ্ট বেশি হয়। এমনকি সন্তানের অটিজমে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। মনোযোগ ঘাটতিজনিত অসুখ বা এডিএইচডিও বেশি হয় গর্ভকালীন প্যারাসিটামল সেবনে। স্পেনে পরিচালিত আরেক গবেষণায় দেখা যায়, গর্ভকালীন সময় প্যারাসিটামল সেবন করলে গর্ভস্থ শিশু অটিজমে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে।
প্যারাসিটামলজনিত জটিলতা কমানোর জন্য, সতর্কতা হিসেবে মনে রাখতে হবে কিছু কথা:
১) প্যারাসিটামল আছে এমন ওষুধ একসঙ্গে একাধিক সেবন করা যাবে না।
২) নিয়মিত প্যারাসিটামল সেবন করতে হবে, এমন অবস্থা হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
৩) কোনো অবস্থাতেই দিনে ৪০০০ মিলিগ্রাম এর বেশি প্যারাসিটামল সেবন করা যাবে না।
৪) আগে থেকেই যাঁদের লিভারের অসুখ আছে, তাঁরা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া প্যারাসিটামল সেবন করবেন না।
৫) অ্যালকোহল সেবন করলে প্যারাসিটামল সেবন করবেন না।
৬) গর্ভকালীন যখন-তখন প্যারাসিটামল নেওয়া যাবে না।
৭) তিন দিনের বেশি হয়ে গেছে অথচ জ্বর ছাড়ছে না- এক্ষেত্রে প্যারাসিটামল সেবন না করা ভালো।
রেফারেন্স:
- https://www.kalerkantho.com/print-edition/doctor-acen/2016/08/13/392819
- https://www.sasthabangla.com/paracetamol/
লিখেছেন:
Amit Kumar Saha
Department of Pharmacy (4th year), University of Asia Pacific
Very informative article!