রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্যাভাস

রোগব্যাধি স্বাস্থ্য টিপস স্বাস্থ্য সংবাদ

রমজানে ডায়াবেটিস রোগীরা বেশ অসুবিধায় পড়ে যান কারণ এই সময় তাদের খাদ্যাভাস এবং ঔষধের সময়সূচি পরিবর্তন আসে। ফলে কখনও কখনও তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে বা কমে যেতে পারে। তাই রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর জন্য সঠিক ও নিয়মতান্ত্রিক খাদ্যাভাস খুবই জরুরি। তবে যাদের হাইপোগ্লাইসেমিয়া ঘন ঘন হয় বা অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস এর কারণে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল এমন বা গর্ভবতী মহিলা যাদের ইনসুলিন নিতে হয় বা যাদের ডায়াবেটিস রোগে জটিলতা রয়েছে তাদের রোজা না রাখাই শ্রেয়। তবে তারা চাইলে রাখতে পারে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। এদের বাইরে প্রত্যেকেই রোজা রাখতে পারবে যারা খাদ্য তালিকা, ঔষধ অথবা ইনসুলিন এর মাধ্যমে তাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।
রমজানে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্যালরিরচাহিদা একই রকম থাকে, শুধু খাবার গ্রহণ ও সময়ের কিছু পরিবর্তন হবে। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের বেলায় যে যে বিষয় গুলি লক্ষ্য রাখতে হবে তা হলোঃ
ক্যালরির পরিমাণ রমজানে সাধারণত তিনবার খাওয়া হয়। তা হলো ইফতার, রাতের খাবার ও সেহেরী। দৈনন্দিন ক্যালরির পরিমাণ আগের মতোই থাকবে, কেবল সময়সূচি বা খাবারের ধরণ পরিবর্তিত হতে পারে।
ইফতার ইফতারের খাবারের পরিমাণ হবে সকালের নাস্তার সমপরিমাণ। পানিশুন্যতা রোধে শরবত একটি অপরিহার্য পানীয়। চিনি ব্যাবহার না করে টক জাতীয় ফলের ( লিচু, কাঁচা আম, কমলা ) শরবত খাওয়া যেতে পারে। ইফতারে একসঙ্গে প্রচুর খাবার না খেয়ে ধাপে ধাপে খান। এতে রক্তে হঠাৎ ই শর্করার মাত্রা বেড়ে যাবে না। বেশি মিষ্টি জাতীয় ও ভাজা-পোড়া তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাবার যেমন রান্না করা ছোলা, সবজির সালাদ, চিড়া- টকদই, স্যুপ, ফল ইত্যাদি। একটি কি দুটি খেজুরও খাওয়া যেতে পারে।
সন্ধ্যা রাতে ( ইফতার পরবর্তী ) অন্য সময়ের রাতের খাবারের সমপরিমাণ হবে রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর খাবার। সন্ধ্যা রাতে খাবার খাওয়া একেবারেই বাদ দেওয়া যাবেনা। কম করে হলেও খেতে হবে। এসময় ডায়াবেটিস রোগীরা রোজার আগে রাতে যেভাবে খেতেন সেভাবেই ভাত অথবা রুটি খাবেন, সাথে থাকবে মাছ অথবা মাংস এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ শাক সবজি।
সেহরিতে ( ভোররাতের খাবারে ) ডায়াবেটিস রোগীর সেহরির খাবারের পরিমাণ হবে অন্যদিনের দুপুরের খাবারের সমপরিমাণ। এসময় রুটি অথবা ভাত আপনার পছন্দ অনুযায়ী গ্রহণ করুন। সেহরিতে চাহিদা অনুযায়ী মাছ/মাংস/ডাল ও সবজি খাবেন সাথে সর ছাড়া এক গ্লাস দুধ থাকলে আরও ভালো হয়।
পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের মাধ্যমে এই সময় অনেকটাই সুস্থ থাকা যায় যেমন লাল আটা, লাল চালের ভাত, শস্য ও শস্য জাতীয় খাবার। বেশি বেশি শাকসবজি, ফলমূল এবং কলাই জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। উচ্চ ক্যালরি যুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। বেশি বেশি পানি এবং তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। ক্যাফিনযুক্ত খাবার যেমন চা, কফি, কোকা কোলা খাওয়া যাবে না কারণ এগুলো পানিশূন্যতা সৃষ্টি করে। রোজা রেখে দিনের বেলা অতিরিক্তি পরিশ্রম ও ব্যায়াম না করাই ভালো। এতে রক্তে সুগার হঠাৎ কমে যেতে পারে এবং অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার কারণে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। তবে সন্ধ্যার পর চাইলে কেউ হালকা হাঁটাহাঁটি করতে পারেন।
মনে রাখতে হবে অতিরিক্ত বা অল্প খাবার গ্রহণ দুটিই ডায়াবেটিক রোগীর জন্য ক্ষতিকর। তাই সবসময় রুটিন অনুযায়ী খাবার খেতে হবে।

লেখকঃ মোছাঃ নারজিনা আকতার।
৪র্থ বর্ষ- ২য় সেমিস্টার, ৪র্থ ব্যাচ,
ফার্মেসী বিভাগ, মাভাবিপ্রবি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *