ফার্মেসীঃ-
ফার্মেসী ‘মাল্টি ডিসিপ্লিনারি’ একটি বিষয় এবং স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের একটি বিশেষ শাখা। সহজভাবে এটি হলো ওষুধবিজ্ঞান। ওষুধ বানানো, এর মান নির্ধারণ, ব্যবহার, বিতরণ, পরিবেশন—এসবই এর আলোচ্য বিষয়।
ফার্মাসিস্ট কারা?
একজন ফার্মাসিস্ট হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফার্মেসি, কমিউনিটি ফার্মেসি, অনলাইন ফার্মেসি, ভেটেরিনারি ফার্মেসি প্রভৃতি বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখেন। ঔষধের ক্রিয়াকলাপের প্রক্রিয়া সম্পর্কে অর্জিত জ্ঞান ব্যবহার করে ফার্মাসিস্ট বুঝতে পারেন যে কিভাবে সেগুলো সর্বাধিক সুবিধা,নূন্যতম পার্শ প্রতিক্রিয়া অর্জন ও ঔষধের মিথস্ক্রিয়া এড়ানো সম্ভব।
• যা যা যোগ্যতা অর্জন করতে হয়ঃ
ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহারবিদরা ঔষধের প্রাণরাসায়নিক কার্যপদ্ধতি ও প্রভাব, ঔষধের ব্যবহার, নিরাময় বা আরোগ্যমূলক ভূমিকা,
পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া, সম্ভাব্য ঔষধীয় আন্তঃক্রিয়া ও এ সংক্রান্ত নজরদারি-যোগ্য চলরাশিগুলি সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। একই সাথে তারা শারীরস্থান, শারীরবৃত্ত ও রোগ-শারীরবৃত্ত সম্পর্কেও অধ্যয়ন করেন। ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহারবিদরা এই বিশেষায়িত জ্ঞান রোগী, চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ব্যক্তিদের কাছে জ্ঞাপন ও ব্যাখ্যা করেন। দেশভেদে পেশাদারী সনদ লাভের জন্য অন্যান্য আবশ্যকীয় শর্তের পাশাপাশি ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহারবিদদেরকে ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহার বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর বা ডক্টরেট উপাধি অর্জন করতে হয়।
• ক্যারিয়ার কোথায়ঃ-
এই বিভাগ তরুণ শিক্ষার্থীদের কাছে ক্যারিয়ার হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। সময়ের সঙ্গে এই বিভাগ–সম্পর্কিত চাকরির ক্ষেত্রও সম্প্রসারিত হচ্ছে।
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে ওষুধের চাহিদা পূরণের জন্য যেসব কোম্পানি সক্রিয়, সেখানে আকর্ষণীয় বেতনে ওষুধের ফর্মুলেশন, উৎপাদন, মান উন্নয়ন, নিয়ন্ত্রণ, নিশ্চিতকরণ, স্থিতিশীলতা—বিভিন্ন ক্ষেত্রে ফার্মাসিস্টরা কাজ করেন।
ফার্মেসিগুলোতে পণ্য ব্যবস্থাপনা, পণ্যের মানোন্নয়ন, মান নিয়ন্ত্রণ, প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিভাগে স্নাতক ফার্মাসিস্টদের চাহিদা রয়েছে।
সরকারি বিভিন্ন কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা, সশস্ত্র বাহিনী, সরকারি হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে উচ্চ বেতনে ফার্মাসিস্ট নিয়োগ নেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সরকারের ড্রাগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে চাকরির সুযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল এবং ক্লিনিকে ফার্মাসিস্ট, ক্লিনিক্যাল ফার্মাসিস্ট, ফার্মেসি ম্যানেজার বা তথ্য বিভাগে নিয়োগ নেওয়া হচ্ছে।
এ ছাড়া শিক্ষকতা, গবেষণা বা দেশের বাইরে কাজ করার সুযোগ তো রয়েছেই।
• ফার্মাসিস্ট এবং ওষুধের দোকানদারদের মধ্যে পার্থক্যঃ-
আমাদের দেশে তিন ক্যাটাগরির ফার্মাসিস্ট রয়েছে।
১) গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট (এ গ্রেড)ঃ- যারা বিজ্ঞান বিভাগ হতে জীববিজ্ঞানসহ এইচএসসি পরীক্ষায় পাশ করার পর দেশের স্বীকৃত সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হতে চার বছর অথবা পাঁচ বছর মেয়াদী কোর্স সম্পন্ন করার পর বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিল হতে নিবন্ধিত হয় তাদেরকে গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট বলা হয়।
২) ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট (বি গ্রেড)ঃ- -যারা বিজ্ঞান বিভাগ হতে জীববিজ্ঞানসহ এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করার পর ইন্সটিটিউটশন অব হেলথ টেকনোলজি(IHT) হতে তিন বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করে তাদেরকে ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট বলা হয়।
৩) ফার্মেসী টেকনেশিয়ান (সি গ্রেড)ঃ-
বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিল কর্তৃক পরিচালিত ফার্মেসি সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন কোর্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সকলে ফার্মেসি টেকনিশিয়ান।
মাধ্যমিক (এস.এস.সি) বা স্বীকৃত সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর, বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিল ও বাংলাদেশ কেমিস্টস এন্ড ড্রাগিস্টস সমিতি (বিসিডিএস) কর্তৃক যৌথভাবে পরিচালিত ত্রৈ-মাসিক ফার্মেসি সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন র্কোসের প্রশিক্ষণ সফলভাবে সম্পন্ন করার পর বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিলের অধীনে ফার্মেসি সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে ফার্মেসি টেকনিশিয়ান হিসাবে নিবন্ধিত হওয়ার যোগ্য হবে।
উপরের তিন ক্যাটাগরির ফার্মাসিস্টরাই বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিল কর্তৃক লাইসেন্স প্রাপ্ত হয়। কিন্তু শুধুমাত্র গ্রাজুয়েট এবং ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্টরা সরাসরি স্বাস্থ্যসেবায় ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যদিকে সি গ্রেড ফার্মাসিস্টরা ডাক্তারদের করা প্রেসক্রিপশনের ভিত্তিতে শুধুমাত্র ঔষধ বিক্রয় করতে পারে।
লেখকঃ মারিয়া মৌ
বিভাগঃ ফার্মেসী
সেশনঃ ২০১৭-২০১৮