এন্টিবায়োটিক অনুজীববিজ্ঞান জগতের এমন একটি আবিষ্কার যা কিনা ব্যক্টেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাক থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সংগৃহীত হয়ে ব্যক্টেরিয়া,ভাইরাস ও ছত্রাকক ধংস বা বংশ বিস্তার রোধে ব্যবহ্রত হয়।যেমনঃ সেফিক্সিম, সিপ্রোফ্লক্সাসিন ইত্যাদি। বিভিন্ন ধরনের ব্যক্টেরিয়া, ভাইরাস জনিত রোগ নিরাময়ে বহুল প্রচলিত এই ঔষধ আমাদের যেমন করে নিরাময় করেছে অনেক কঠিন থেকে কঠিনতম রোগ তেমনি বর্তমান বিশ্বকে প্রতিনিয়ত হুমকির সম্মুখীন হতে বাধ্য করছে।
সাধারণত ,ভাইরাস জনিত রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত এই ঔষধ জীবন্ত ব্যক্টেরিয়া, ভাইরাসের বিপাকীয় রাসায়নিক বিক্রিয়া থেকে সংগৃহীত করা হয়। এন্টিবায়োটিক নামকরণ এর বহু বছর আগের থেকে চায়নাতে ফোড়া রোগ এবং পা এর সংক্রমণ জনিত রোগের চিকিৎসা এ সয়াবিন দধির মোল্ড ব্যবহারের প্রচলন ছিল।পরবর্তীতে ১৯২৯ সালে আলেকজান্ডার ফ্লেমিং “Staphylococcus aureus” এর আগার প্লেটে কাজ করার সময় অন্য মোল্ড এর সংস্পর্শে এসে উক্ত ব্যক্টেরিয়ার “ক্লিয়ার জোন” আবিষ্কার করেন। তিনি এই “Miracle drug” এর পিছনে “Penicillium” এর উপস্থিতি লক্ষ্য করেন এবং তিনি এর নামকরণ করেন “এন্টিবায়োটিক পেনিসিলিন”।
যুগে-যুগে ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাসজনিত বিভিন্ন ধরনের রোগ যেমনঃহুপিং কফ, ইউরেনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন,ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি রোগের চিকিৎসায় ব্যবহ্রত হয়ে আসছে। কিন্ত চিকিৎসাক্ষেত্রের এই আবিষ্কার যত সফলতার সাথে যুগের পর যুগ চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে তার চেয়েও ধাবমান বেগে ঔষধ হিসেবে সক্ষমতা হারাচ্ছে এই এন্টিবায়োটিক এবং এন্টিবায়োটিক জাতক সকল ঔষধ।
এর মূলে রয়েছে এন্টিবায়োটিক এর অসংলগ্ন ব্যবহার, ভুল ডোস এর ব্যবহার, কোর্স শেষ না করে ঔষধ সেবন বন্ধ করে দেয়া ইত্যাদি।
এন্টিবায়োটিক এর এই যথেচ্ছ ব্যবহার মানব জীবনে তৈরি করেছে নতুন একটি শব্দ যার নাম এন্টিবায়োটিক রেসিস্টেন্স।যার অর্থ কোন এন্টিবায়োটিক এর প্রতি নির্দিষ্ট ব্যক্টেরিয়ার প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে ব্যক্টেরিয়া বা ভাইরাসের প্রতি উক্ত ঔষধের কার্যকারিতা হারানো। এই এন্টিবায়োটিক রেসিস্টেন্স সম্প্রতি বিশ্বে স্বাস্থক্ষাতে তৈরি করছে ভয়াবহ ধরনের চ্যালেঞ্জ। সম্প্রতি বিশ্বের বিকট আকার ধারণ করা করোনা মহামারী এর উদাহরণ। প্রতিনিয়ত নিজেদের জেনেটিক কোড চেঞ্জ করে মিউটেশনের মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে শরীরে আক্রমন করার প্রবল ক্ষমতাধারী এই অনুজীব প্রত্যেকটি এন্টিবায়োটিক এর বিরুদ্ধে লড়াই করে গড়ে তোলে এন্টিবায়োটিক রেসিস্টেন্স। ফলে কর্মদক্ষতা হারায় ঔষধ এবং সক্ষম হয় অনুজীব।
যদি কিনা নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ বাংলাদেশ এর প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয় তবে এই দেশটির মানুষের এন্টিবায়োটিক সেবনে দেখা গেছে ভয়াবহ উদাসীনতা, অবহেলা। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের শ্রেনীর মানুষের মধ্যে রয়েছে এর চরম ব্যপকতা। প্রেস্কিপশন ছাড়া সামান্য জ্বর, কাশি তে ডাল ভাত এর মত এন্টিবায়োটিক সেবনের অনুশীলন তাদের শরীরে তৈরি করছে এন্টিবায়োটিক রেসিস্টেন্স। সম্প্রতি আইইডিসিআর এর একটি গবেষণায় উঠে এসেছে ১৭ টি এন্টিবায়োটিক তার কার্যক্রম হারিয়েছে কেবল অতিরিক্ত সেবনের জন্য। যেখানে এন্টিবায়োটিক ছাড়া ই সেরে যেত অসুখ সেখানে এন্টিবায়োটিক এর ওভারডোস, অসমাপ্ত কোর্স তৈরি করেছে এই ভয়াবহ চিত্র। ফলে ঔষধ হিসেবে জায়গা হারাচ্ছে এসব ঔষধ এবং তৈরি হচ্ছে বিশেষ সংরক্ষিত ঔষধ সেবনের অবস্থা। শুধু তাই না পোল্ট্রি ফার্মে মুরগি,গরু, হাঁস এর অতিরিক্ত এন্টিবায়োটিক এর ব্যবহার তৈরি করছে এন্টিবায়োটিক রেসিস্টেন্স।
সচেতনতা, আইন, সৎ মানবিকতা আমাদের কে পারে এই ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে। আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে প্রেস্কিপশন বিহীন এন্টিবায়োটিক সেবন এবং ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধকরণ, জনসচেতনতা পারে এই এন্টিবায়োটিক রেসিস্টেন্সের বিরুদ্ধে রেসিস্টেন্ট হতে।তা না হলে প্রাণের বিনিময়ে, শারীরিক জটিলতা নিয়েও আগমনী কালে এই ক্ষুদ্র ভাইরাস ব্যক্টেরিয়ার কাছে হার মানতে হবে মানব সভ্যতা কে।
সোর্স
১। Microbiology book by Michael J. Pelczar, JR. E.C.S Chan
২।ডেইলি বাংলাদেশ প্রকাশিত ৭ জুলাই,২০১৮ প্রতিবেদন
৩।বিবিসি বাংলা ২৬ নভেম্বর,২০১৯ প্রতিবেদন
লিখেছেন :
Samiha Mahjabin
Department of Pharmacy (4th year 1st semester), University of Asia Pacific
Really informative❤️
Very informative…
Really comprehensive and informative.
Informative!