আপনি কি জানেন চিকিৎসক আপনাকে যে ওষুধ প্রেসক্রাইব করেন তার ডোসেজ রেজিমেন (যেমন, দিনে ৩ বার সেবন করতে হবে) বলতে কি বোঝায় কিংবা এরকম ভাবে কেন বলা হয়? আর এটি যথাযথভাবে মেনে না চললে কোনো রোগীর ক্ষেত্রে কি কি সমস্যা দেখা দিতে পারে?
ফার্মেসির পরিভাষায় কোনো একটি ওষুধের (যেমন : প্যারাসিটামল) ডোসেজ রেজিমেন বলতে বোঝায় কোনো রোগী সেই ওষুধটি কোন মাত্রায় (ডোজ) দিনে কত বার সেবন করবেন, কত সময় পরপর সেবন করবেন, কেবলমাত্র কোনো নির্দিষ্ট সময়ে সেবন করতে হবে কি না, কতদিন ধরে ওষুধটি সেবন করবেন ইত্যাদি। এখন ধরুন চিকিৎসক আপনাকে কোনো একটি ওষুধ দিনে তিন বার বা তিন বেলা সেবন করতে বলেছেন; এই কথাটির প্রকৃত অর্থ হলো আপনাকে ঐ ওষুধটি দৈনিক প্রতি ২৪/৩ অর্থাৎ ৮ ঘন্টা পরপর সেবন করতে হবে। কোনো রোগী যদি অজ্ঞতাবশতঃ কিংবা অসচেতনতার কারণে এই নিয়মটি মেনে না চলেন তাহলে সেই ওষুধটি থেকে তিনি কাঙ্খিত ফলাফল (থ্যারাপিউটিক ঈফেক্ট) সম্পুর্নরূপে পাবেন না।
আমরা জানি, আমাদের শরীরে কোনো ওষুধকে প্রবেশ করানো (এডমিনিস্টার) হলে ওষুধটি তার নির্ধারিত টার্গেট এ কাজ করার পর এক সময় সেটি শরীর থেকে বের হয়ে যায় (ইলিমিনেশন)। একজন রোগীর শরীরে (রক্তে) ওষুধ একটি ন্যূনতম নির্দিষ্ট ঘনমাত্রার ওপর না থাকলে ওষুধটি তার কাজ শুরু করতে পারে না। এই ন্যূনতম ঘনমাত্রাকে বলা হয় মিনিমাম ইফেক্টিভ কনসেন্ট্রেশন বা সংক্ষেপে এম ই সি। আবার রক্তে ওষুধটির ঘনমাত্রা একটি নির্দিষ্ট মান কে অতিক্রম করলে সেটি শরীরের জন্য বিষ হয়ে যায়; অর্থাৎ ওষুধটি তখন শরীরে নানাবিধ টক্সিক বিক্রিয়া প্রদর্শন করতে শুরু করে। এইসব বিষয়গুলো বিবেচনা করেই ওষুধবিজ্ঞানী তথা ফার্মাসিস্টগণ সেই ওষুধটির ডোসেজ রেজিমেন নির্ধারণ করে থাকেন। যেমন : প্যারাসিটামল এর সাধারন ডোজ হচ্ছে ৫০০ মিলিগ্রাম এবং প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে সাধারণত দিনে ৪-৬ ঘন্টা পর পর সেবন করতে বলা হয় (ট্যাবলেট)।
এখন ওষুধ আমাদের শরীরে কাজ করার পর যখন শরীর থেকে বের হয়ে যেতে থাকে তখন রক্তে ওষুধ এর ঘনমাত্রা যাতে মিনিমাম ইফেক্টিভ কনসেন্ট্রেশন এর নিচে না নেমে যায় সেই উদ্দেশ্যেই একটি নির্দিষ্ট সময় পর ওষুধের পরবর্তী ডোজটি দিতে বলা হয়।
আমরা অনেকেই সচেতনতার অভাবে এই ধরণের নিয়মগুলো সবসময় মেনে চলি না। তারমানে আপনি যখন একটি ওষুধ সেবন করছেন তার ডোসেজ রেজিমেন অনুযায়ী যদি ৮ ঘন্টা পর পর সেবন করতে বলা হয় তাহলে ৮ ঘন্টা পরপরই সেই ওষুধটির পরবর্তী ডোজ আপনাকে আবার সেবন করত্র হবে ; নতুবা রক্তে ওষুধটির ঘনমাত্রা এম ই সি থেকে নিচে চলে যাবে এবং পরবর্তীতে ঐ ওষুধটির আরেকটি ডোজ না সেবন করা পর্যন্ত এবং পরবর্তী ডোজ সেবন করার পর সেটির ঘনমাত্রা এম ই সি লেভেল এ না যাওয়া পর্যন্ত আপনার শরীরে সেই ওষুধটি কোনো কাজ করবে না ; অর্থাৎ আপনি ওষুধটির কোনো থ্যারাপিউটিক একশন পাবেন না।
যদিও দৈনন্দিন ছোটখাটো অসুস্থতায় কিছুটা এদিক সেদিক হলেও মারাত্মক কিছু ঘটে না তবে জটিল অসুস্থতার ক্ষেত্রে ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে এই ধরণের নিয়মগুলো কঠোরভাবে মেনে না চললে মারাত্মক কিছু ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়।
সুতরাং, চলুন আমরা সকলেই চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন মোতাবেক ওষুধ সময়মত সেবন করি এবং ওষুধের যৌক্তিক ও সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করি।
Reference:
- Applied Biopharmaceutics and Pharmacokinetics by leon shargel;
- Susanna Wu-pong and Andrew Yu.
লিখেছেন:
Tanjina Akter Suma
Department of Clinical Pharmacy and Pharmacology, University of Dhaka