সিস্টিক ফাইব্রোসিস একটি গূরুত্বর জিনগত অবস্থা,যা আমাদের শ্বাসযন্ত্রের ও পরিপাকতন্ত্রের মারাত্বক ক্ষতি করে।সিস্টিক ফাইব্রোসিস ,সিস্টিক ফাইব্রোসিস ট্রান্সমেমব্রেন সঞ্চালন রেগুলেটর জিন বা CFTR নামক জিনের ত্রুটির কারণে হয়ে থাকে।এই জিনটি আমাদের শরীরের কোষগুলোর ভেতরের এবং বাইরের পানি ও লবণের গতি নিয়ন্ত্রণ করে। যখন কোন দম্পতি উভয়েই সিস্টিক ফাইব্রোসিসের একটি করে জিন বহন করেন তখন তাদের সন্তানের মাঝে এই রোগ প্রকাশ পায়। সাধারনত বাবা-মার মাঝে এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় না। সিস্টিক ফাইব্রোসিস আমাদের দেহের মিউকাস,ঘাম এবং পাচকরস উৎপাদনকারী কোষগুলাকে আক্রান্ত করে।
মিউকাস বা শ্লেষ্মা হলো একধরনের পিচ্ছিল ,পাতলা তরল পদার্থ যা আমাদের দেহে উৎপন্ন হয়। শ্লেষ্মা আমাদের দেহের বিভিন্ন অঙ্গের নালীসমূহকে আর্দ্র রাখে এবং নানা জীবাণু থেকে মুক্ত রাখে।সিস্টিক ফাইব্রোসিসে আক্রান্ত রোগীদের দেহে এই শ্লেষ্মা অধিক ঘন হয়। এই বেশি ঘন শ্লেষ্মা তাদের শ্বাসনালীতে আটকে গিয়ে শ্বাসনালীকে ব্লক করে রাখে, ফলে রোগ-জীবাণু বাসা বাধে এবং শুরু হয় শ্বাসতন্ত্রের মারাত্নক সংক্রমণ।ফুসফুস বারবার সংক্রমিত হতে থাকে এবং এক পর্যায়ে ফুসফুসের কার্যকারীতা নষ্ট হয়ে যায়।সিস্টিক ফাইব্রোসিস ধীরে ধীরে আমাদের দেহের বিভিন্ন অঙ্গকে আক্রান্ত করে।সিস্টিক ফাইব্রোসিসে মৃত্যুর মূল কারন বারবার শ্বাসতন্ত্রের ইনফেকশন হওয়া এবং ফুসফুস তার স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলার কারণেই রোগীকে নিয়ে যায় মৃত্যুর দিকে। আমাদের অগ্ন্যাশয়ের পাচকরসের রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে সিস্টিক ফাইব্রোসিস দেহের বিপাকে বেশ বিঘ্ন ঘটায়।
সিস্টিক ফাইব্রোসিস ককেশীয়ানদের মধ্যে ব্যাপকভাবে দেখা যায়।ভারতে ১০,০০০জনের মধ্যে ১ জনের সিস্টিক ফাইব্রোসিস হয়ে থাকে।বিশে প্রায় ৭০,০০০ মানুষ সিস্টিক ফাইব্রোসিসে আক্রান্ত হয়ে থাকে এর মধ্যে আমেরিকাতেই ৩০,০০০ এর অধিক ।
সিস্টিক ফাইব্রোসিসের লক্ষণসমূহঃ
অবস্থার তীব্রতা অনুযায়ী রোগের লক্ষণগুলো পৃথক হয়। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে কৈশোরে বা যৌবনের আগ পর্যন্ত এই রোগের কোনো লক্ষণই অনুভব হয় না , আবার কিছু মানুষের ক্ষেত্রে শৈশবকাল থেকেই লক্ষণগুলো অনুভব হতে থাকে। সাধারণত যে লক্ষণগুলো দেখা যায় তার মধ্যে রয়েছেঃ
● প্রচন্ড কাশি,যা ক্রমাগত বাড়তে থাকে
● ঘন কফ বা শ্লেষ্মা
● শ্বাসকষ্ট
● কাশির সাথে রক্ত
● নাক বন্ধ থাকা
● জ্বর
● বুকে ব্যাথা
● বারবার নিউমোনিয়া হওয়া
● সাঁ সাঁ করে নিঃশ্বাস ফেলা
● এলার্জি
● অস্বাভাবিকভাবে ওজন বেড়ে যাওয়া
● কোষ্ঠকাঠিন্য
● লিভার সিরোসিস
● ডায়াবেটিস
● দূর্গন্ধময় ও পরিমাণে বেশি মলত্যাগ করা
● ঘনঘন পিপাসা এবং প্রসাব হওয়া।
যৌবনে শনাক্ত হওয়া মানুষের ক্ষেত্রে যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়ঃ
● বন্ধ্যাত্ব(infertility)
● অগ্ন্যাশয় প্রদাহ (bouts of pancreatitis)(স্ফীত অগ্ন্যাশয়)
● নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার মতো লক্ষণগুলি দেখা দেয় । তাদের ঘামে লবণ স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি থাকে। এই রোগের বেশিরভাগ লক্ষণ হজম এবং শ্বাসযন্ত্রকে প্রভাবিত করে।
সিস্টিক ফাইব্রোসিস নির্ণয় পদ্ধতিঃ
আমেরিকাতে প্রতিটি শিশুর জন্মের পরই ,নিচের পদ্ধতিগুলোর মাধ্যমে সিস্টিক ফাইব্রোসিসে আক্রান্ত কিনা তা পরীক্ষা করা হয়ে থাকে
রক্ত পরীক্ষাঃ
অগ্ন্যাশয় থেকে ইমুনোরিঅ্যাক্টিভ ট্রিপ্সিনোজেন বা আইআরটির মাত্রা পরীক্ষা করা হয়। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে আইআরটির মাত্রা বেশি হয়ে থাকে।
ডিএনএ পরীক্ষাঃ
CFRT জিনের মিউটেশন পরীক্ষা করা হয়ে থাকে।
ঘাম পরীক্ষাঃ
ঘামে লবণের মাত্রা পরীক্ষা করা হয়।
চিকিৎসাঃ
সিস্টিক ফাইব্রোসিস সম্পূর্ণভাবে নিরাময় করা সম্ভব না।তাই এর সাথে যুদ্ধ করে কিভাবে ভালো থাকা যায় সেটাই এই রোগের চিকিৎসার মূলমন্ত্র।উন্নত বিশ্বে আধুনিক চিকিৎসার সহায়তায় এখন এই রোগে আক্রান্তরা গড়ে ৩৭ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সকল সুবিধা না থাকায় গড় আয়ু আরও কম হয়।
১.শ্বাসনালি পরিষ্কারঃ
ঘন মিউকাস যেনো শ্বাসনালীতে আটকে না যায় ,সেজন্য শ্বাসনালি পরিষ্কার রাখতে হবে। এন্টিবায়োটিক থেরাপি প্রয়োগ করা যেতে পারে। প্রদাহ না হওয়ার ওষধ প্রয়োগ করতে হবে।
২.ফুসফুস ট্রান্সপ্লান্টঃ
যদি ওষধ প্রয়োগ অকার্যকর হয় তবে ফুসফুসের ট্রান্সপ্লান্ট করা যেতে পারে।
৩.পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
৪.নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস করতে হবে।
৫.ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অগ্নাশয় এনজাইম গ্রহণ করা যেতে পারে। সিস্টিক ফাইব্রোসিসের ক্ষেত্রে যত দ্রুত রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা শুরু করা হবে ততই রোগীর আয়ু বৃদ্ধি করা সম্ভব।আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করতে হবে এবং তার পরিবারকে এ বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন থাকতে হবে।
রেফারেন্সঃ
১.https://www.mayoclinic.org/diseases-conditions/cystic-fibrosis/symptoms-causes/syc-
20353700
২.https://www.cff.org/What-is-CF/About-Cystic-Fibrosis/
৩.https://www.medicalnewstoday.com/articles/147960
৪.https://www.myupchar.com/bn/disease/চ্যস্তিচ-ফিব্রসিস
৫.https://www.sasthabangla.com/%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%B8%E0%A7%8D
%E0%A6%9F%E0%A6%BF%E0%A6%95-
%E0%A6%AB%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0
%A7%8B%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%B8/
৬.https://ghealth121.com/treatments/cystic-fibrosis/?lang=বন
লিখেছেনঃ
Shinjana Siddiqua
Department of Pharmacy (3rd Year)
Mawlana Bhashani Science and technology University