Views: 22
নরমাল ডেলিভারিতে বাচ্চা কিংবা বাচ্চার মা অথবা দুজনেই যখন আশংকাজনক অবস্থায় উপনীত, সিজারটা তখনই করা হয়ে থাকে উন্নত বিশ্বে। কিন্তু আমাদের দেশেতো সিজার করানোটা সহজতর উপায় এবং আভিজাত্যের মাপকাঠি হিসেবে পরিণত হয়েছে। মাকে প্রসবব্যাথা থেকে পরিত্রাণের জন্যও অনেকেই সিজারের দিকে ঝুকছেন প্রতিনিয়ত। কিন্তু এতে যে কত বড় ক্ষতিটা বাচ্চা এবং বাচ্চার মায়ের হল তা অনেকের হয়তোবা অজানা।
এই ধরুন, আপনার আগামী মাসের ৫ তারিখে সকাল ১১টায় একটা গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা আছে। একটিবার চোখ বন্ধ চিন্তা করুনতো, আপনার অজ্ঞাতসারেই পরীক্ষাটা ২-৪ দিন অথবা একসপ্তাহ এগিয়ে আনা হল
যা সম্পর্কে পরীক্ষা কমিটি ৬ মাস পূর্বেই ওয়াকিবহাল, কিন্তু আপনি তার কিছুই জানেন না। সৌভাগ্যক্রমে আপনি জানতে পারলেন পরীক্ষার দুই ঘন্টা আগে, যার ফলে আপনি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারলেন। আপনার এত আকাঙ্ক্ষিত পরীক্ষাটিতে আপনি কতটুকু ভাল করবেন? ঠিক তেমনটিই ঘটে একটা সিজারিয়ান বাচ্চার ক্ষেত্রে। আমরা যেমন সেমিস্টার ফাইনালের আগে ২-৪ দিন পড়ে কোপাইয়া এক্সাম দেই, ঠিক তেমনই একটা বাচ্চা গর্ভাবস্থায় তার ম্যাক্সিমাম ম্যাচিউরিটি (সর্বোচ্চ পরিপক্কতা) অর্জন করে নরমাল ডেলিভারির দুয়েকদিন আগে। যেকারণে দেখবেন অনেক সিজারিয়ান বাচ্চারই সহজেই সর্দি-কাশি, ঠান্ডা ও ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা। এসব বিষয়তো আপনার আমার দৃষ্টিগোচরে হচ্ছে। আর আপাতত আপনার আমার জ্ঞানের পরিধির বাইরে ওদের যে ক্ষতিটা হচ্ছে তা হচ্ছে, "Incomplete brain development, immaturity of many important organ and incomplete immune system etc".
এবার আসুন মায়ের কথায়, নরমাল ডেলিভারিতে একটা মায়ের প্রসবব্যাথাটা যদি আমি, আপনি(বাচ্চার বাবা), অথবা মাতৃত্বের স্বাদ বঞ্চিত মেয়ে চিন্তা করতে চাই তা কখনই সম্ভবপর নয়। তবে একটু ধারণা দেওয়া যাক, আমাদের মানবদেহের সবচেয়ে বড় এবং মজবুত হাড় ফিমার। ঐ একটা ফিমারের ওপর যদি ৮বেল প্রেশার পড়ে তাহলে সেটা চুড়মার হয়ে যাবে। একটু শক্ত হয়ে বসুন, নরমাল ডেলিভারিতে মায়েদের ব্যাথাটা প্রায় ৫৬ বেল। মানে আপনার আমার হাটুর ওপরে যে রানের হাড্ডিটা, ওরকম সাতটি হাড় ভাঙার ব্যাথা। সৃষ্টি কর্তার কৃপা, শারীরবৃত্তীয় রিলাক্সিন হরমোনের ক্রিয়া এবং আর মায়েদের প্রবল ধৈর্য্যের যোগফলই বাচ্চাটাকে পৃথিবীর আলো দেখায়। এখানে জেনে রাখা ভাল, মায়ের দেহের সঞ্চিত শক্তিই এখানে নরমাল ডেলিভারির ব্যাথাটার সাথে ফাইট করে। আপনি যদি আপনার দেহের এককেজি ওজন কমাতে চান তাহলে আপনার ৭৭০০ কিলোক্যালরি খরচ করতে হবে ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ অথবা কায়িক শ্রম দ্বারা; আর যদি আপনি এককেজি ওজন বাড়াতে চান তাহলে ৭৭০০ কিলোক্যালরি সঞ্চয় করতে হবে, অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের দ্বারা। এজন্যই গর্ভাবস্থায় মায়েদের যথোপযুক্ত পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করতে হয়, কেননা গর্ভের শিশুটিও পুষ্টির জন্য তার মায়ের ওপরেই নির্ভরশীল। তত্ত্বীয়ভাবে গর্ভাবস্থায় একজন মা নরমাল ডেলিভারিতে খাপখাইয়ে নেওয়ার জন্য প্রায় ৮০,০০০ কিলোক্যালরি সঞ্চয় করেন। পরিমানটা আপনি ওয়েটে কনভার্ট দেখতে পাবেন ১০কেজিরও বেশি। বিপত্তি বাধে কখন জানেন?
যখন গর্ভবতী মা পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার গ্রহনে অক্ষম হন তখনই; কারণ গর্ভবতী মা যখন পর্যাপ্ত পুষ্টি পান না তখন বাচ্চার দেহও সুঘটিত হয় না। মায়ের শরীর হয়ে ওঠে নরমাল ডেলিভারির অনুপযোগী। তখন এই ক্রিটিকাল কন্ডিশনে গর্ভবতী মায়ের একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়ায় সিজারিয়ান পদ্ধতি।
কিন্তু একটা সুস্থ স্বাভাবিক গর্ভবতী মা যখন সিজার ডেলিভারি করেন তখন যে অপরিমেয় ক্ষতিটা হয় তা শুনলে আপনার গায়ের লোমে কাটা দিয়ে ওঠবে। প্রথমত ৮০,০০০কিলোক্যালরির যেটা সঞ্চিত ছিল সেটা আর খরচ হয়না, ফলশ্রুতি কি দাঁড়াবে তা নিজের জ্ঞানেই ভাবুন। হ্যাঁ, ১০-১২ কেজি ওজন বাড়ানোর মত কিলোক্যালরি জমে থাকবে শরীরে। যা সূচনা করবে প্রারম্ভিক স্থুলতা (obesity); সিজার করা মায়েদের শারীরিক পরিশ্রম সাধনেও তৈরি হয় নানা প্রতিবন্ধকতা। দ্বিতীয়ত, এই স্থুলতা ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, হৃদরোগের মত আরও বিভিন্ন জটিল রোগের পূর্বসূচক হিসেবে কাজ করে। এবার ভাবুন কোনটা বেছে নিবেন, "নরমাল ডেলিভারি নাকি সিজারিয়ান ডেলিভারি"? আমার মনে হয় না প্রয়োজন ছাড়াই আপনারা সিজারকে বেছে নিবেন। সুস্থ মা ও সুস্থ সবল শিশুর প্রয়োজনীয়তা যে কতটুকু তা উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর দিকে তাকালেই বুঝতে পারা যায়। তাই আসুন আমরা অহেতুক অপ্রয়োজনীয় সিজার ডেলিভারি করানোর মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসি।
লিখেছেনঃ
Hasin Ahammed
Food Technology and Nutritional Science (4th Year)
Mawlana Bhashani Science and Technology University