রমজান মাসে মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও দৈনন্দিন কার্যকলাপের যথেষ্ট পরিবর্তন ঘটে। সেইসাথে দেহের খাদ্যশোষণ, বিপাক, পরিপাক ও রেচন প্রক্রিয়া অনেকাংশে পরিবর্তন হওয়া স্বাভাবিক । স্বাভাবিকভাবেই রমজানে আমরা দুপুরের ভারী খাবারটাকে সেহেরি খাবারে স্থলাভিষিক্ত করি। আবার কেউ কেউ ইফতারের খাবারে আমেজ আনতে এত পরিমান তেলে ভাজা খাবার রাখে, যা দেহের কোলেস্টেরল বা ফ্যাট বা চর্বির এত পরিমাণ বৃদ্ধি করে যা উচ্চ রক্তচাপ স্ট্রোক ও বিভিন্ন ধরনের রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
একথা জেনে রাখা ভালো, আমাদের স্বাভাবিক দিনের মতোই সকাল বা দুপুরের খাবারের সময় দেহ তার নিয়ম অনুযায়ী খাবারের চাহিদা করে,যখন একজন মানুষ রোজা রাখে তখন ঐ সময় সে খাবারের যোগান দিতে না পারলেও দেহ কিন্তু তার কাজ সে করবেই। অর্থাৎ দেহ থেকে স্টোরেজ করা চর্বি বা ফ্যাট শোষণ করে। অতএব রোজা রাখার প্রেক্ষিতে দেহ থেকে ক্ষতিকর চর্বি বা ফ্যাট অপসারিত হয় । এই ফ্যাট বা চর্বি স্ট্রোক ও উচ্চ রক্তচাপ, রক্ত চলাচল ও বিভিন্ন রোগের কারণ। যখন আমরা সারাদিন রোজা রেখে ইফতারের সময়ে অধিক তেলে ভাজা খাবার গ্রহণ করি তখন নিশ্চয়ই উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি হয়। যা আমাদের দেহে দ্বিগুণ হারে চর্বি বা কোলেস্টেরল পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
অতএব ইফতারির সময় তেলে ভাজা খাবার পরিহার করতে হবে, ফলমূল রাখতে হবে।
খেজুর আমাদের দেহের ক্লান্তি দূরীকরণে যথেষ্ট যোগানদাতা।
বেশি করে পানি পান করতে হবে কেননা পানির ঘাটতি হলে আমাদের দেহে কোষের যে প্রোটোপ্লাজম গুলো আছে ওইগুলো শুকিয়ে যায়। আর ওই গুলো শুকিয়ে গেলে রেচন প্রক্রিয়া, বিপাক প্রক্রিয়সহ সকল কাজেই বিঘ্ন ঘটবে । যা মৃত্যুর কারণ হতে পারে ।
ইফতারির সময় একদম উদর পূর্ণ না খাওয়া । কেননা ওই সময় পরিপাক ক্রিয়ার উপর যথেষ্ট চাপ পড়ে। বদহজমের কারণ হতে পারে।
ইফতারি খাওয়ার পর মাগরিবের নামাজের মাধ্যমে শরীর যথেষ্ট হালকা অনুভূত হয়। যা একদিকে ধর্মীয় ইবাদত ও অন্যদিকে দেহের পরিপাক ক্রিয়ার যথেষ্ট সাহায্যকারী ভূমিকা পালন করে।
সেহরির সময় আমিষ জাতীয় খাদ্য যথেষ্ট পরিমাণে রাখতে হবে। কেননা সারাদিনের শক্তি ও পুষ্টির যোগান দেওয়া হয় এই সেহরি খাবারকে কেন্দ্র করে। সেহরি খাওয়ার সময়টা যেন প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হয় ,যদি সেহরি খাওয়ার সময়ে প্রতিদিন সময়ানুবর্তিতা না থাকে তাহলে পাকস্থলীতে এসিড নির্গমন হবে, যা গ্যাস্ট্রিক আলসারের কারণ।
আরেকটা কথা মনে রাখতে হবে যে ধূমপান ও বদঅভ্যাসগুলো অতি সহজে ত্যাগ করা যায় এই রোজার খাদ্যভ্যাসকে কেন্দ্র করে ।
এখন মোট কথা, কোনক্রমেই দেহে পানির ঘাটতি যেন না হয় সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে, ইফতারের সময় অধিক তেলে ভাজা খাবারের পরিবর্তে ফলমূল রাখতে হবে।
সেহরির সময় আমিষ সমৃদ্ধ ভারী খাবার রাখা যেতে পারে।
মূলত রোজার এই মাসের খাদ্যভ্যাস চালিত হোক প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ও নিয়মকে কেন্দ্র করে। তাহলে আমাদের দেহের পরিপাক, বিপাক,রেচন প্রক্রিয়াসহ সকল প্রক্রিয়া সুন্দরভাবে সম্পন্ন হবে। যা দিনশেষে এক সুস্থ, সুখী, সমৃদ্ধ শরীরের উপহার দিবে এই রমজান মাসে।
লেখকঃ শেখ সায়মন পারভেজ হিমেল।
২য় বর্ষ-১ম সেমিস্টার, ৭ম ব্যাচ, ফার্মেসী বিভাগ, মাভাবিপ্রবি।