ডায়াবেটিস : বহুমূত্র রোগ বা মধুমেহ বা ডায়াবেটিস মেলিটাস একটি হরমোন সংশ্লিষ্ট রোগ।আমাদের শরীরে অগ্নাশয় থেকে নিঃসৃত ইনসুলিন নামক হরমোনের সম্পূর্ণ বা আপেক্ষিক ঘাটতির কারণে বিপাকজনিত সমস্যার সৃষ্টি হয়ে রক্তে শর্করার পরিমান বৃদ্ধি পায় এবং একসময় তা প্রস্রাবের সাথে বেরিয়ে আসে, এই সামগ্রিক অবস্থাকে ডায়াবেটিস মেলিটাস সংহ্মেপে ডায়াবেটিস বলে।রক্তে গ্লাইক্যাটেড হিমোগ্লোবিন পরিক্ষার মাধ্যমে ডায়াবেটিস পরিহ্মা করা হয়।ডায়াবেটিস প্রধানত চার ধরণের :টাইপ-১,টাইপ-২,গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, প্রিডিয়াটিস ডায়াবেটিস।
টাইপ-১:টাইপ-১ ডায়াবেটিস,যা অপ্রাপ্তবয়স্কদের ডায়াবেটিস বা জুভেনাইল ডায়াবেটিস নামেও পরিচিত। এটি বহুমূত্র রোগের একটি ধরন এক্ষেত্রে রোগীর শরীরে অগ্ন্যাশয় থেকে খুবই সামান্য বা কোনো ইনসুলিন উৎপন্ন হয় না।ফলে শরীরে শর্করার পরিমান বেড়ে যায় যা হাইপারগ্লাইসিমিয়া নামে পরিচিত।এক্ষেত্রে রোগীকে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ইনসুলিন পাম্প নিতেই হয়।অন্যথায় শর্করার পরিমান বেড়ে গিয়ে অম্লজনিত বিষক্রিয়া ঘটবে। ফলে রোগী অজ্ঞান হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হতে পারে।সাধারণত ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের ৫-১০% মানুষের ক্ষেত্রে টাইপ-১ ডায়াবেটিস পরিলক্ষিত হয়।
কারণ: শরীরে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া আক্রমন করলে ইমিউন সিস্টেম সক্রিয় হয়। ফলে ইমিউন সিস্টেম ইনসুলিন তৈরির কোষগুলো ধংস করে দেয়। ফলে ইনসুলিন উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয় এবং এর ফলে টাইপ-১ ডায়াবেটিস হয়ে থাকে।তাছাড়া বংশপরম্পরায় টাইপ-১ ডায়াবেটিস হতে পারে।
টাইপ—২: এটি প্রাপ্ত ব্য়স্কদের ডায়াবেটিস নামেও পরিচিত। সাধারণত ত্রিশউর্দ্ধ মানুষের টাইপ -২ ডায়াবেটিস হয়ে থাকে । এক্ষেত্রে রোগীর দেহে আংশিকভাবে ইনসুলিন তৈরি হয় কিন্তু শরীর সঠিকভাবে ইনসুলিন ব্যবহার করতে পারে না।মূলত ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এর ফলে টাইপ-২ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। ফলে পলিডিপথিয়া,পলিইউরিয়া,ও ওজন হৃাস ঘটে।সাধারণত ডায়াবেটিস আক্রান্ত লোকদের ৯০-৯৫% টাইপ-২ ডায়াবেটিস আক্রান্ত।
কারণ:এই ধরনের ডায়াবেটিস এ রোগীর কোষগুলো ইনসুলিনের স্বাভাবিক কাজে বাধাগ্রস্ত করে।কিন্তু অগ্নাশয় পর্যাপ্ত ইনসুলিন সরবরাহ করতে ব্যাহত হয়।ফলে গ্লুকোজ কোষের ভিতর ঢুকতে পারেনা এর ফলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। তাছাড়া অধিক স্থুলকায় এবং জীনগত ও পরিবেশগত কারনেও এ প্রকার ডায়াবেটিস হয়ে থাকে।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস :অনেক সময় গর্ভবতী অবস্থায় প্রসূতিদের ডায়াবেটিস ধরা পড়ে কিন্তু প্রসবের পর ডায়াবেটিস থাকে না এপ্রকার ডায়াবেটিস কে গড়ভকালীন বা মাতৃকালীন ডায়াবেটিস বলে।এটি গর্ভবতী মা এবং সন্তানের উভয়ের জন্যই ঝুঁকির কারণ।জটিলতা থেকে মা ও শিশুকে রক্ষার জন্য নিয়মিত ইনসুলিনের প্রয়োজন।
কারণ:গর্ভাবস্থায় অমরা হরমোন তৈরি করে।যা দেহকোষ গুলোকে ইনসুলিন প্রতিরোধী করে।ফলে ইনসুলিনের ক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হয়। যার ফলে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হয়ে থাকে।
প্রিডিয়াটিস ডায়াবেটিস : যখন রক্তের গ্লুকোজ স্তর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয় তবে টাইপ 2 ডায়াবেটিস হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করার পক্ষে এটি পর্যাপ্ত পরিমাণে নয়, তখন ব্যক্তির প্রিভিটিবিটিস হয়।
ডায়াবেটিসের লক্ষনসূমহ:
১.ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া ও পিপাসা লাগা
২.ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া
৩.মিষ্টি জাতীয় জিনিসের প্রতি আকর্ষন বৃদ্ধি
৪.সময় মতো খাওয়া দাওয়া না করলে শর্করা কমে গিয়ে হাইপো হওয়া
৫.চামরায় শুষ্ক, খসখসে ও চুলকানি ভাব
৬.কোনো কারণ ছাড়াই অনেক ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি।
চিকিৎসা :চিকিৎসার মাধ্যমে ডায়াবেটিস রোগ নিরাময় করা সম্ভব হয় না কিন্তু নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।চিকিৎসকদের মতে তিনটি “D”মেনে চললে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এগুলো হলো :Discipline, Diet,ও Dose ।স্বাস্থকর খাদ্যগ্রহন,নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম,সুশৃঙ্খল জীবনব্যবস্থা,নিয়মিত ইনসুলিন গ্রহন ইত্যাদি ডায়াবেটিস রোগের মহৌষধস্বরূপ।
ডায়াবেটিসের জটিলতা :
১.হৃদরোগ
২.কিডনি বিকল
৩.অন্ধত্ব
৪.বিষন্নতা
ডায়াবেটিস প্রতিরোধের উপায়:
১.শারীরিক পরিশ্রম করা
২.তামাকজাত দ্রব্য,অ্যালকোহল ও অন্যান্য মাদকদ্রব্য পরিহার করা
৩.বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
৪.সঠিক খাদ্যব্যবস্থা -চিনি ও মিস্টি পরিহার, শর্করা জাতীয় খাদ্য কম খাওয়া,আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া,মাংস ও তৈলাক্ত খবার পরিহার করা।
ডায়াবেটিসের কারণ, নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা,ও প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। কার্যকর স্বাস্থ্য শিক্ষার মাধ্যমে ডায়াবেটিস-এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম, ওজন নিয়ন্ত্রণ তথা সুশৃংখল জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
(তথ্যসংগ্রহঃ bn.m.wikipedia.org,. www.ghealth 121.com/treatments, BBC news, Biology Text book Of 9-10 class)