জলাতঙ্ক : কিছু জানা-অজানা

রোগব্যাধি স্বাস্থ্য সংবাদ

জলাতঙ্ক কি?

জলাতঙ্ক বা র‍্যাবিস একটি আনপ্রেডিক্টেবল এবং বিপদজনক ভাইরাস। আমাদের দেশে এটি নিত্য দিনের সমস্যা। জলাতঙ্ক একটি ভাইরাস ঘটিত সংক্রামক রোগ। এটি র‍্যাবডোভিরিডি(Rhabdoviridae) পরিবারের

জেনাস লাইসাভাইরাস(Lyssa virus)এর অন্তর্গত র‍্যাবিস ভাইরাস(Rabies virus)  দ্বারা হয়।র‍্যাবিস একটি  এ্যানভেলপড(Enveloped), আর.এন.এ(RNA)  ভাইরাস। ভাইরাসটি মূলত নার্ভাস সিস্টেম কে এ্যাফেক্ট করে এবং পরবর্তীতে মৃত্যু ঘটায়। এটি শিশু,বয়স্ক,গর্ভবতী যে কারোর হতে পারে।

রোগের বিস্তারঃ

কুকুর, বিড়াল,শেয়াল,বেজি,বাদুড়, চিকা র কামড়,আঁচড়, লালাার মাধ্যমে বা যে কোনো র‍্যাবিস্ আক্রান্ত মানুষের সংস্পর্শে  ছড়ায়

কুকুড়,বিড়ালের ভ্যাক্সিন দেবার পরেও তার লালাতে ভাইরাস না থাকলেও নখ,শরীরে ভাইরাস থাকতে পারে যা কুকুর বিড়াল কে কোলে নিলে বা সংস্পর্শে  গেলে হতে পারে।

কামড় বা আঁচড়ে তাৎক্ষণিক করনীয় কি?

  • প্রবাহমান পানি তে ১৫-২০ মিনিট ক্ষতস্থানে ধোয়া
  • কাপড় কাচার সোডা বা সাবান ক্ষতস্থানে  লাগানো, এতে ৭০-৮০% জীবানু মারা যায়
  • এ্যান্টিসেপটিক ওয়াশ

জলাতঙ্কের লক্ষণ সমূহঃ

  • জ্বর
  • মাথা ব্যাথা
  • বমি
  • মেন্টাল কনফিউশান 
  • হাইপারএ্যাকসাইটেশন
  • পানি ভীতি
  • প্রচুর লালাক্ষরণ 
  • ইনসমনিয়া
  • প্যারসিয়াল প্যারালাইসিস
  • মৃত্যু 

জলাতঙ্কের লক্ষণ কখন প্রকাশ পাবে?

লক্ষণ কত দ্রুত প্রকাশ পাবে সেটা নির্ভর করে কতগুলি বিষয় এর উপর, যেমন-

  • কি পরিমান ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করেছে
  • সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম বা ব্রেন এর কতটা কাছাকাছি  কামড় দিয়েছে 
  • আক্রান্ত ব্যাক্তির ইমিউনিটি 

কেন জলাতঙ্কের টিকা নিতে হবে?

কামড় বা আঁচড়ের ১৫-৩০ দিনের মধ্যে সিম্পটম  দেখা না দিলে যে আপনি সুরক্ষিত এমনি নয়।

র‍্যাবিস ভাইরাস  ২ বছর পর্যন্ত  মানুষের শরীরে সুপ্তবস্থায় থাকতে পারে, তাই ভ্যাক্সিন নেয়া অত্যাবশ্যক।

যে সব প্রাণীর কামড়ে ভ্যাক্সিন দিতে হবে

  • কুকুর
  • বিড়াল
  • শেয়াল
  • বেজি
  • বাদুর
  • বানর

যেসব প্রাণীর কামড়ে ভ্যাক্সিন প্রয়োজন নেই-

  • ইঁদুর 
  • কাঠবিড়াল

যে অবস্থায় ভ্যাক্সিন নিলে সমস্যা নেই-

  • গর্ভাবস্থায় 
  • মাতৃদুগ্ধ দেয়া কালীন
  • শিশুবস্থায়
  • যে কোনো অসুস্থতায়
  • বযস্ককালে

কখন ভ্যাক্সিন দিব এবং কত দিন দিতে হবে?

কামড়ের ১৪ দিন পর্যন্ত শরীরে ভাইরাস নিষ্ক্রিয়  থাকে তাই ভ্যাক্সিন এর মধ্যেই দেয়া জরুরি।

এটি ২ হাতে মাংসে ইনজেকশন হিসেবে দিতে হয়।

১ম ডোজঃ ০ তম দিন অর্থাৎ  যেদিন টিকা দিবে

২য় ডোজঃ ৭ম দিম

৩য় ডোজঃ ২১-২৮ তম দিন

জলাতঙ্ক প্রতিরোধে করনীয় কি?

  • কুকুর বিড়াল কে গর্ভকালীন সময়ে টিকা দেয়া
  • কুকুর,বিড়াল ছানা কে ১২ সপ্তাহে টিকা দেয়া
  • বেওয়ারীশ কুকুর বিড়াল গন টিকা র আওতায়  আনা  
  • র‍্যবিড আক্রান্ত প্রাণী কে মেরে ফেলা

সর্বপরি পোষ্য কুকর,বিড়াল কে টিকা প্রদান ও সচেতনতার মাধ্যমে জলাতঙ্কের আক্রমণ  ও ঝুকি কমানো সম্ভব। 

Reference –

  • Rabies by Alan C Jackson
  • Bats and human health by Lisa A Beltz
  • Animal husbandry and Veterinary Science by Prof. Dr.M.A.Samad
  • www.medicalinfo24.com

লিখেছেন:

রুপাইদা আক্তার শিলা

চতুর্থ বর্ষ,

ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন (D.V.M)   

 বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ 

2 thoughts on “জলাতঙ্ক : কিছু জানা-অজানা

  1. অনেক উপকারী একটা জনসচেতনতামূলক পোস্ট। অনেক ধন্যবাদ যিনি মুল্যবান নিউজটি পোস্ট করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *