ডায়াবেটিস একটি চ্যালেঞ্জ

রোগব্যাধি স্বাস্থ্য সংবাদ

ডায়াবেটিস শব্দটি আমাদের সবার কাছেই বেশ পরিচিত। এমন কোনো পরিবার খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে কোনো ডায়াবেটিসের রোগী নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ডায়াবেটিস এখন একটি মহামারি রোগ। এই রোগের অত্যধিক বিস্তারের কারণেই সম্প্রতি এমন ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
ডায়াবেটিস কী এবং কেন হয়?
আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন বলছে, ডায়াবেটিস এমনই একটি রোগ, যা কখনো সারে না। কিন্তু এই রোগকে সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। যখন কারও ডায়াবেটিস হয়, তখন ওই মানুষের শরীরে ইনসুলিন হরমোনের নিঃসরণ কমে যায়। ফলে দেহের কোষে গ্লুকোজ পৌঁছাতে পারে না। এতে করে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। সাধারণত প্রস্রাবের মাধ্যমে অতিরিক্ত গ্লুকোজ শরীর থেকে বের হয়ে যায়। এই কারণে ডায়াবেটিস রোগীর ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। যখন প্রস্রাব বেশি হয়, তখন ডায়াবেটিসে ভোগা রোগী তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়েন।

সূত্রঃ প্রথম আলো

ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো হলো:
১. ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া

২. তেষ্টা পাওয়া

৩. নিয়মিত খাওয়ার পরও ঘন ঘন খিদে

৪.প্রচণ্ড পরিশ্রান্ত অনুভব করা

৫. চোখে ঝাপসা দেখা

৬. শরীরের বিভিন্ন অংশের কাটাছেঁড়া সহজে সারে না

৭. খাওয়া সত্ত্বেও ওজন কমে যাওয়া

৮. হাতে-পায়ে ব্যথা বা
মাঝে মাঝে অবশ হয়ে যাওয়া

সূত্রঃ প্রথম আলো

ডায়াবেটিস মাত্রাঃ
আমেরিকান ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশনের গাইডলাইন অনুযায়ী এইচবিএ১সির মান ৫.৭- এর নিচে থাকলে তাকে স্বাভাবিক ধরা যায়। এটি ৬.৫-এর বেশি হলে ডায়াবেটিস আছে বলে ধরা হবে। এই মান ৫.৭ থেকে ৬.৫-এর মধ্যে থাকলে প্রি-ডায়াবেটিস বা ডায়াবেটিসের পূর্বাবস্থা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

সূত্রঃ প্রথম আলো

ডায়াবেটিস শনাক্তের সহজ পরীক্ষাঃ
ডায়াবেটিস শনাক্ত করার জন্য সবচেয়ে সঠিক ও বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি হলো ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট বা ওজিটিটি। এই পদ্ধতিতে রোগীকে সকালে খালি পেটে একবার রক্তে গ্লুকোজ পরীক্ষা করতে হয়, তারপর ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ শরবত পানের দুই ঘণ্টা পর আরেকবার রক্তে গ্লুকোজ পরীক্ষা করা হয়। এই পদ্ধতিতে নির্ভুলভাবে ডায়াবেটিস ও প্রি-ডায়াবেটিস নির্ণয় করা যায়।

সূত্রঃ প্রথম আলো

বর্ডার লাইন ডায়াবেটিসঃ
যদি ৭.৮ এর বেশি, কিন্তু ১১ মিলিমোল বা তার চেয়ে কম হয়, তবে বর্ডার লাইন ডায়াবেটিস বলে ধরে নেয়া যায়। আর যদি চিনির মাত্রা ১১ মিলিমোলের বেশি হয়, তবে ডায়াবেটিস আক্রান্ত বলে ধরে নিতে হয়। খালি পেটে বা খাবারের আগে রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষাটি সকালে খালি পেটে করতে হয়।

সূত্রঃদক্ষিনবঙ্গ

শিশুদের কি ডায়াবেটিস হয়?
ডায়াবেটিস বড়দেরই বেশি হতে দেখা যায়। তাই বলে শিশুরা এই রোগ থেকে মুক্ত নয়। শিশুদের ডায়াবেটিস ভিন্ন ধরনের, একে বলে টাইপ-১ ডায়াবেটিস। শিশুদের ডায়াবেটিস ইনসুলিন হরমোনের অভাবেই হয়ে থাকে।

সূত্রঃ শ্লোকপিডয়া

ডায়াবেটিস সারানোর উপায়ঃ
শিশুদের রক্তে গ্লুকোজ পরীক্ষা সচরাচর করা হয় না, তাই প্রায়ই সময়মতো ধরা পড়ে না। শিশুদের ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে: * ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাচ্ছে। * বেশি বেশি প্রস্রাব করছে। আবার নতুন করে বিছানায় প্রস্রাব করা শুরু করেছে। * বেশি বেশি পানি খাচ্ছে, এমনকি রাতে ঘুম থেকে জেগেও। * আগের মতো আর উদ্দীপ্ত লাগছে না, অল্পেই ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। * ঘন ঘন বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ হচ্ছে, সুস্থ হচ্ছে না সহজে।

রক্তে সুগারের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া কন্ট্রোল করা যায় বেশ কিছু উপায়ে-
 ইনসুলিন ব্যবহার:
একটি সুস্থ-স্বাভাবিক শরীর রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রনে যথাযথ ইনসুলিন তৈরী করতে পারে। তবে ডায়াবেটিস আক্রান্ত শরীর যথাযথ ইনসুলিন তৈরী করতে পারে না। ফলে ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে বাইরে থেকে ইনসুলিন ব্যবহার করা হয়। কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স জনিত খাবার: রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রনের আরেকটি উপায় হল কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স জনিত খাবার খাওয়া।যার ফলে রক্তের সুগার রোলার ওঠানামা বন্ধ হয এছাড়াও সুগার(ডায়াবেটিস) কন্ট্রোল করার বা কমানোর(সারানোর) উপায় গুলির মধ্যে অন্যতম হল খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ ও শরীর চর্চা করা।

 সুগার(ডায়াবেটিস) রোগীর খাদ্য তালিকা এমন হওয়া উচিত:
চিনি বা মিষ্টি পরিত্যাগ করতে হবে। কার্বহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবার না খাওয়া ক্যালোরিযুক্ত খাবার পরিমাণ মত খাওয়া। নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়া অনিয়ম না করা। অভুক্ত না থাকা অল্প অল্প করে বারবার খাওয়া। তেতো জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে খাওয়া। সাদা আটা বা ময়দার রুটির পরিবর্তে ভুসিযুক্ত লাল আটা খেতে হবে। ফাস্টফুড পরিত্যাগ করতে হবে। ধূমপান পরিত্যাগ করতে হবে।

 সুগার কমাতে ব্যায়াম:
যে কোনও রোগকে কন্ট্রোলে রাখতে ব্যায়াম বা শরীরচর্চা খুবই কার্যকরী উপায়। সুগার রোগীর ক্ষেত্রে ও সুগার নিয়ন্ত্রণে ব্যায়াম বা শরীর চর্চা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে প্রতিদিন যদি নিয়ম করে একটু হাঁটা যায় রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয় এবং তাতে শরীর যথেষ্ট অ্যাক্টিভ ও সুস্থ থাকে।

সূত্রঃ শ্লোকপিডয়া

লিখেছেনঃ


Md.Yamin Bhuiyan
Department of Pharmacy (4th Year)
Mawlana Bhashani Science and Technology University

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *