উষ্ণ আবহাওয়ায় কিছুক্ষণ থাকলে বা কোনো ধরণের শারীরিক পরিশ্রম করলে মানুষের শরীর থেকে ঘাম নির্গত হওয়া খুব স্বাভাবিক বিষয়।
ঘাম শরীরের অত্যাবশ্যকীয় একটি প্রক্রিয়া। বরং ঘাম না হওয়াই কখনো বড় ধরনের অসুস্থতার লক্ষণ। কিন্তু কখনো কখনো দেখা যায় কিছু মানুষ স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি ঘেমে থাকে।
বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ অতিরিক্ত ঘামের যন্ত্রণা নিয়ে বেশ ভুগে থাকেন। হাত, পা, মুখ, বগল ঘামাকে মেডিকেলের ভাষায় হাইপারহাইড্রোসিস বা মাত্রাতিরিক্ত ঘাম বলা হয়। এটি এমন এক রোগ যা অনিয়ন্ত্রিত স্নায়ুপদ্ধতির জন্য হয়ে থাকে। এর ফলে আমরা প্রায়ই অনুষ্ঠান, পরীক্ষাসহ কোনও গুরুত্বপূর্ণ অবস্থায় খুব সমস্যায় পড়ে থাকি। প্রতিদিনের কাজকর্ম যেমন গাড়ি চালাতে গিয়ে, টাচ-স্ক্রিন যন্ত্রপাতি বর সময় বা অন্যান্য কাজ করতে গিয়ে বেশ বিপত্তি ঘটে থাকে।
হাইপারহাইড্রোসিস দুই ধরনের হয়ে থাকে।
১। প্রাইমারি অথবা ফোকাল হাইপারহাইড্রোসিস :
এইক্ষেত্রে শরীরের নির্দিষ্ট কিছু অংশ থেকে ঘাম বাহির হয়, যথা হাতের তালু, পায়ের পাতা, বগল এবং মাথা থেকে ঘাম বের হয়। প্রাইমারি হাইপারহাইড্রোসিস মূলত ফিজিওলজিক্যাল । রাগের সময়, ভয়ের সময় anxiety, ও stress, এর সময় অধিকহারে Sympathetic সিস্টেম stimulation এর কারণে ঘর্মগ্রন্থি গুলি অধিকহারে active হয়ে যায়। আর তখন
ফোকাল হাইপারহাইড্রোসিস তথা মাথা, মুখ, হাত, পা, থেকে অতিরিক্ত ঘাম বের হতে পারে।। এইটার জন্য ভয়ের কোনো কারণ নাই। প্রাইমারী হাইপারহাইড্রোসিস অনেকের ক্ষেত্রে ফ্যামিলিগত ভাবে
ট্রান্সমিশন হতে পারে।
২। সেকেন্ডারি হাইপারহাইড্রোসিস বা জেনারেলাইজড হাইপারহাইড্রোসিস :
কোন সিস্টেমিক রোগের কারণে যদি সারা শরির থেকে অস্বাভাবিক হাতে ঘাম বের হয়, তখন এইটাকে সেকেন্ডারি হাইপার হাইড্রোসিস বলে।
হাইপারহাইড্রোসিসের কারণঃ
হাইপারহাইড্রোসিসের কারণ এখনও অস্পষ্ট। গবেষণায় দেখা গেছে যে জেনেটিক কারণগুলি প্রাইমারি হাইপারহাইড্রোসিসের জন্য দায়ী।
১.সাধারণত শরীরের মেটাবলিজম রেটের উপর ঘাম হওয়া নির্ভর করে। শরীরে মেটাবলিজম বেশি থাকলে বেশি ঘাম হয়।
২.হঠাৎ বেশি ঘাম হওয়া হার্ট অ্যাটাকের একটি লক্ষণ। অনেক সময় হার্টের কোনও সমস্যা থাকলে রোগীর বেশি ঘাম হতে পারে।
৩. ডায়াবেটিসে রোগীর রক্তে শর্করা কমে গেলে ঘাম হতে পারে।
৪. ব্লাড প্রেশার হঠাৎ বেড়ে গেলেও রোগী বেশি ঘামতে শুরু করেন।
৫.অনেক সময় অতিরিক্ত উদ্বেগের কারণে ঘাম হয়। উদ্বেগে হরমোনের ভারসাম্য ব্যাহত হয়।
৬.অনেক সময় অতিরিক্ত উদ্বেগের সময় ঘাম হয়। উদ্বেগ চাপযুক্ত হরমোনকে বাড়িয়ে দেয়। এতে বেশি ঘাম হয়।
৭.মেনোপজের সময় অনেক নারীরই হট ফ্লাস ও ঘামের সমস্যা হয়। বুক ও ঘাড়ে বেশি ঘাম হয়।
হাইপারহাইড্রোসিসের চিকিৎসাঃ
প্রেসক্রিপশন ক্রিম:
গ্লাইকোপাইরোলেটযুক্ত একটি ক্রিম মাথা এবং মুখকে প্রভাবিত করে হাইপারহাইড্রোসিসের চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে।
প্রেসক্রিপশন
অ্যান্টিপারসপিরেন্ট: এটি অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড ধারণকারী একটি অ্যান্টিপারস্পাইরেন্ট যা হাইপারহাইড্রোসিসের চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে চোখ এবং ত্বক জ্বালা অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
স্নায়ু-অবরোধকারী ওষুধ:
কিছু কিছু মৌখিক ওষুধ রাসায়নিকগুলিকে ব্লক করে যা কিছু স্নায়ুকে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে, ঘাম কমাতে সাহায্য করে। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলির মধ্যে মূত্রাশয়ের ব্যাধি, শুষ্ক মুখ এবং ঝাপসা দৃষ্টি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস: হতাশার জন্য নেওয়া ওষুধগুলি ঘাম কমাতে পারে এবং হাইপারহাইড্রোসিসের সাথে সম্পর্কিত উদ্বেগও কমাতে পারে।
বোটক্স ইনজেকশন: বোটুলিনাম টক্সিন ইনজেকশন দিয়ে চিকিৎসা ঘামের কারণ সৃষ্টি করা স্নায়ুগুলিকে সাময়িকভাবে ব্লক করতে সাহায্য করতে পারে। হাইপারহাইড্রোসিসে আক্রান্ত রোগীদের কার্যকর ফলাফলের জন্য একাধিক ইনজেকশনের প্রয়োজন হতে পারে।
তথ্যসূত্রঃ
১. jago news24
২. bbc.com
৩. sangbad pratidin
লেখকঃ সিনজানা সিদ্দিকা
বিভাগঃ ফার্মেসী
সেশনঃ ২০১৭-২০১৮