পিরিয়ড বা মাসিক চলাকালীন নারীর খাদ্যাভাস

মানসিক স্বাস্থ্য রোগব্যাধি স্বাস্থ্য টিপস

পিরিয়ড বা মাসিককালীন সময়ে সব নারীই কমবেশি সমস্যার মুখোমুখি হন। এ সময় শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। যার মধ্যে- পিরিয়ডের ব্যথা, মেজাজ খিটখিটে থাকা, রাগ, উত্তেজনা, খাবারে অনীহা ইত্যাদি। তবে বেশ কিছু অভ্যাস পিরিয়ডকালীন জটিলতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

এই সময় খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রেও যত্নবান হওয়া উচিত। পিরিয়ডের সময় পুষ্টি চাহিদা পূরণ না হলে তাতে রক্তশূন্যতা থেকে আরও গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে। এই সময় যে খাবার গুলো খাওয়া উচিতঃ-

১)পানি: পিরিয়ডের সময় রক্তপাতের পাশাপাশি শরীর থেকে অনেক পানি বেরিয়ে যায়। এই অভাব পূরণ করতে প্রচুর পান করতে হবে। তবে কোনো পানীয় নয়, শুধু পানি। চা, কফি, কোলা ইত্যাদি দিয়ে এই ঘাটতি পূরণ হবে না।

২)আয়রন সমৃদ্ধ খাবার: যেসব খাবারে প্রচুর আয়রন পাওয়া যায় যেমন মাছ, মাংস, ডিম, কলিজা, কচু শাক, পুঁই শাক, ডাটা শাক, ফুলকপির পাতা, ছোলা শাক, ধনে পাতা, তরমুজ, কালো জাম, খেজুর, পাকা তেঁতুল ও আমড়া খাবার চেষ্টা করতে হবে। এই খাবারগুলো শরীরের আয়রনের ঘাটতি পূরণ করবে।

৩)মাছ: সামুদ্রিক মাছে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল, ফ্যাটি এসিড ইত্যাদি। এগুলো পিরিয়ড চলাকালীন শরীরের ক্ষয় পূরণ করে এবং ব্যথা কমাতেও ভূমিকা রাখে।

৪)ফল: শরীরে আয়রনের ঠিকমত শোষণ ও যথাযথ কার্যকারিতার জন্য ভিটামিন সি জরুরি। কিছু সহজলভ্য ফল যেমন পেয়ারা, আমড়া, আমলকি, লেবু, জলপাই, জাম্বুরা, পাকা টমেটো, কামরাঙা, পাকা পেঁপে, আনারস ইত্যাদিতে প্রচুর ভিটামিন সি পাওয়া যায়। পিরিয়ডের সময় এ ফলগুলো খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।

৫)সবুজ শাক-সবজি: সবুজ শাক-সবজিতে আছে প্রচুর আয়রন, যা শরীরের ক্ষয় পূরণে সহায়তা করবে। এটি শুধুমাত্র আয়রন ও বি ভিটামিনে পরিপূর্ণ নয় বরং উচ্চমাত্রায় আঁশও আছে এতে যা কিনা হজমে সহায়তা করে। ভালোভাবে হজম হওয়া পিরিয়ডের সময় সুস্থ থাকার একটি অপরিহার্য শর্ত। তাই প্রতি বেলার খাবারে রাখুন সবুজ শাক সবজি।

৬)কলা: কলা পটাশিয়ামের ও ভিটামিনের খুব ভালো উৎস, যা পিরিয়ডের সময় আপনার জন্য জরুরি। কলা পিরিয়ডের সময় বিষণ্ণতা কমাতেও সহায়ক। এই সময় প্রতিদিনকার খাদ্য তালিকায় একটি কলা রাখুন।

৭)প্রোটিন: ডাল, ডিম, মাছ, মাংস এই সময়ের খাদ্যতালিকায় রাখুন। প্রোটিন ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ার আগ্রহ কমিয়ে দেয়।

৮)চকলেটঃ প্রতি মাসের নির্দিষ্ট সময়ে নারীদের শরীর থেকে যে পরিমাণ ব্লাড বেরিয়ে যায়, তাতে শরীরে ঘাটতি তো দেখাই দেয়। আর এই ঘাটতি পূরণে দরকার প্রয়োজনীয় খাবার গ্রহণ। এছাড়াও এসময়ে অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। ডার্ক চকলেট শরীরের নার্ভ সিস্টেমকে সতেজ ও ঠাণ্ডা করে এবং মেজাজ ঠাণ্ডা করে তাই এটি পিরিয়ডের সময় খাওয়া ভালো।

পিরিয়ডের সময় যে খাবার গুলো খাওয়া উচিত নয়ঃ-

১)দুধ, চিজ বা দইঃ পিরিয়ডের সময় দুধ, চিজ বা দইয়ের মতো ডেইরি প্রডাক্ট বেশি মাত্রায় খেলে বিশেষ কিছু হরমোনের ক্ষরণ এত মাত্রায় বেড়ে যায় যে শারীরিক কষ্ট মাত্রা ছাড়াতে সময় লাগে না। তাই এসময় দুধ এবং তা থেকে বানানো খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।

২)জাঙ্ক ফুডঃ জাঙ্ক ফুড খাওয়া শরীরের পক্ষে ভাল নয়। আর এই সময় এমন খাবার খেলে তো আরও বিপদ! পিরিয়ডের সময় ফ্রায়েড খাবার খেলে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হয়।

৩)লবণঃ পিরিয়ডের সময় বেশি মাত্রায় লবণ রয়েছে এমন খাবার, যেমন ধরুন ফ্রেঞ্চ ফ্রাই জাতীয় পদ বেশি পরিমাণে খেলে শরীরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে, যার প্রভাবে পিরিয়ডকালীন কষ্ট আরো বেড়ে যায়। তাই মাসের এই নির্দিষ্ট সময়ে যতটা সম্ভব কম পরিমাণে লবণ খাবেন।

৪)শসাঃ পিরিয়ডের সময় শসা খেলে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। শসায় উপস্থিত কিছু উপাদান এই সময় শরীরের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে।

৫)খালি পেটঃ পিরিয়ডের সময় খালি পেটে একেবারেই থাকবেন না। এই সময় যেহেতু মাত্রতিরিক্ত পরিমাণে এনার্জি লস হয়, তাই এই ঘাটতি পূরণের ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করাটা জরুরি।

৬)কোল্ড ড্রিঙ্কঃ পিরিয়ডের সময় কোল্ড ড্রিঙ্ক একেবারে খাবেন না। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, এই সময় এই ধরনের পানীয় খেলে ইউটেরাইন ওয়ালে রক্ত থেকে যায়। এমনটা হতে থাকলে ৫-১০ বছর পরে গিয়ে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বহুগুণে বেড়ে যায়।

৭)আইসক্রিমঃ দুধ জাতীয় খাবার যেমন, পনির, চিজ, আইসক্রিম এগুলো খুব বেশি খেতে বারন করা হয়। কারণ এই খাবার গুলোর ফলে পেটে ব্যাথা বেড়ে যাবার সম্ভবনা থাকে। পেটের ভেতর অস্বস্তি বেড়ে যায়। এছাড়াও এগুলোতে বেশি ফ্যাট থাকে।

৮) চাঃ প্রায় সব ধরনের চায়েই ‘ক্যাফেইন’ ও ‘ট্যানিক’ অ্যাসিড থাকে।

‘ট্যানিক অ্যাসিড খাবারে সঙ্গে মিশে শরীরের লৌহ শোষণ ক্ষমতা কমায়। তাই ঋতুস্রাব চলাকালে অতিরিক্ত চা পান করলে লৌহ শোষণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর লৌহের অভাব থেকে হতে পারে মাথাব্যথা, খিটখিটে মেজাজ, অনিদ্রা, অস্বস্তি, স্নায়বিক দুর্বলতা ইত্যাদি।

পরামর্শ: তাই মাসের বিশেষ দিনগুলোতে চা পানের মাত্রা কমিয়ে কুসুম গরম পানি খাওয়াই ভালো।

লেখকঃ উর্মি রায়

বিভাগঃ ফার্মেসী

সেশনঃ ২০১৯-২০২০

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *